ভয়ংকর ক্ষুদা ও রহস্য

সম্পূর্ণ বাস্তব ঘটনা। সালটা ২০২১। বড় ভাই প্লান করে সেন্ট মার্টিন যাবে। তো উনি ফেসবুকের একটা ট্রাভেল গ্রুপের সাথে যোগাযোগ করে টিকিট কনর্ফাম করে ফেলে (প্রাইভেসির কারনে সেই গ্রুপের নাম উল্ল্যেখ করলাম না)। তো রাতে বাসে উঠে সকালে টেকনাফ ঘাঠে নেমে নাস্তা শেষ করি (বলে রাখা ভালো প্যাকেজে আসা-যাওয়া, ৫ বেলা খাওয়া, শীপ টিকেট + ১ রাত রিসোর্ট স্টে ছিলো, যারা নিয়মিত গ্রুপেদের সাথে ট্যুর করেন তারা জানবেন এই সিস্টেম)। উল্লেখযোগ্য যে আমি ছোট বেলা থেকেই বেশি খেতে পারি না। ঘাটে নেমে কোনো রকম নাস্তা শেষ করে শীপে উঠে যাই।

সেন্ট মার্টিন পৌছে প্রথমে ঢুকলাম আমাদের নির্ধারিত রির্সোটে। ড্রেন্স চেঞ্জ করে বাহির হতেই শরীরে একটা দমকা হাওয়া লাগলো। হাওয়া লাগার সাথে সাথেই প্রচন্ড খুদা পায়। পয়েন্ট টু বি নোটেড এর আগে পর্যন্ত আমার কোনো ক্ষুদাই লাগেনি। পরে তারাতারি আমাদের যেই রেস্টুরেন্টে খাবার দেওয়া হবে সেখানে যাই। আমি বাসায় বা অন্য কোথাও সর্বচ্চো দুই প্লেটের বেশি কোনো ভাবেই খেতে পারি না। কিন্তু সেই দুপুরে খাওয়ার টাইমে আমি গুনে গুনে ৭ প্লেট ভাত খেয়ে ফেলি তবুও আমার ক্ষুদা কমার নাম নেই। যা আমার জন্য একদম অসম্ভব। আমার ভাই বার বার জিজ্ঞাস করছে ঠিক আছি কিনা। আমি বললাম অনেক ক্ষুদা লাগছে কিন্তু কেনো তা জানি না। 

আমার এই অবস্থা দেখে এক হুজুর টাইপ আংকেল এসে আমাকে বলে বিসমিল্লাহ + চার কুল পড়ে পানিতে ফু +থু থু দিয়ে সেটা খেতে। বিশ্বাস করেন এই পানি খাওয়ার সাথে সাথে আমার ক্ষুদা শেষ। আর এর একটু পরেই শুরু হয় প্রচন্ড পেট বেথ্যা। আংকেল জানায় সেন্ট মার্টিন থাকা অবস্থায় যাই খাই না কেনো বিসমিল্লাহ + চার কুল পড়ে ফু +থু থু দিয়ে যেনো সেটা খাই। বিকালের নাস্তার সময় মনে ছিলো তাই কিছু হয়নি। কিন্তু রাতের খাবারের সময় সকলের সাথে আড্ডা+ গানে মেতে ছিলাম তাই আর খাবারের সেই নিয়মটা মনে নেই এর কারণে ঠিক দুপুরের অবস্থা। সবার জন্য রাতের খাবারে বরাদ্য ছিলো ৩টা পর‍টা (আমি সাধারণত ২টার বেশি খেতে পারি না) কিন্তু ঐ সময় আলাদা আরো প্রায় ১০টার মতন অর্ডার দিয়ে খাওয়ার পরেও ক্ষুদা কমে না। তখনই আমার ভাই জিজ্ঞেস করে যে আমি বিসমিল্লাহ + চার কুল পড়ে ফু +থু থু দিয়ে খেয়েছি কিনা। আমি বললাম যে আমার তো মনে নেই তখন ভাই বলল এক গ্লাস পানি এভাবে খাওয়ার জন্য। তক্ষন আবার সেই আগের মত ক্ষুদা সাথে সাথে চলে গেলো । রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় আর তেমন কোন সমস্যা হয়নি। পরদিন সকালে নাস্তা + দুপুরে খাওয়ার সময় সেই নিয়ম ফলো করি তাই কোন সমস্যা হয় না।

কিন্তু আবার বিকালে যখন নাস্তা খাওয়ার জন্য যাই তখন মনে থাকে না আবার সেই অস্বাভাবিক খাওয়া শুরু। খাওয়ার মাঝে পাশে থেকে একজন টুরিস্ট(উনি আমাদের সেই গ্রুপের সাথে যান নি) আমায় দেখে বলে উঠলো "চিকন মানুষের একটা বৈশিষ্ট্য থাকে এরা বেশি খেলেও মোটা হয় না, আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে: ভাই আপনারই ভাগ্য সেই ভালো।অনেক খান কিন্তু মোটা হন না, একদম চিকন, আপনার হজম শক্তি ভালোই" এখানে কিন্তু আমি আবারও বলছি আমি গেলে নাস্তা খাওয়ার সময় বিসমিল্লাহ + চার কুল পড়ি নি। কিন্তু উনি এসব বলা মাত্রই আমার ক্ষুদা চলে যায়। শরীর ঠিক একইভাবে একটা গরম বাতাস লাগে সাথে সাথে শরীরটাকে কাপুনি দিয়ে ওঠে। আর অনেক ঘামতে থাকি। আর আর শরীরটা একদম হালকা হয়ে যায়। কিন্তু সাথে আবার সেই পেট ব্যথা। (কিন্তু উনি এই কথা বলার পর থেকে আমার খাবারের রুচি এখন পর্যন্ত আগের থেকে অনেকটাই কমে গেছে।) পরবর্তীতে ঐদিন বিকেলে আমরা সেন্টমার্টিন থেকে ব্যাক চলে আসি। আসার পরে আর আমার তেমন কোনো সমস্যা হয় নি।

এখনো প্রায় সময় মাথার মধ্যে কথা গুলো ঘুরপাক খায়।যে আমার কি ঘঠেছিলো? কেনো আমার অস্বাভাবিক ক্ষুদা পায় আর উনিই বা কে? কেন উনার এইমাত্র কথার কারণে খাবারের রুচির অবনতি হয়?

আজও সব উত্তর অজানা।

কয়েকজন হুজুর কে প্রশ্ন করার পর ওনারা বলেছিলেন যে হয়তো সেই মূহর্তে কোনো জিন ভর করেছিলো তাই অস্বাভাবিক ক্ষুধা পায়। যেহুতু সামুদ্রিক এলাকা। কিন্তু সেই লোকের ব্যাপারে কোন উত্তর কেউ দিতে পারিনি।

ভয়ংকর ক্ষুদা ও রহস্য


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
sr7themes.eu.org