ভুতের গল্প ৫৬ মেয়ে লাশের গল্প
★ কোথায় গেল মেয়েটি? ★লেখা: Shopner Pothik
.
.
কয়েকমাস আগের কথা। সেদিন প্রবল ঠান্ডা হাওয়ায় গায়ে জ্যাকেট পড়ে বিকালে বই কিনতে আন্দরকিল্লায় গিয়েছিলাম। শীতের মধ্যে টুপটাপ টুপটাপ করে অল্প অল্প বৃষ্টি হচ্ছে। সেই বৃষ্টিতে ঠান্ডা আরও বেশি বেড়ে গেল। কিছুটা হাড়কাপা নিয়ে বই কিনা শেষ করলাম। আন্দরকিল্লা এদিকেই জে.এম.সেন হলে আমার এক পুরনো বন্ধু থাকে। ভাবতেছি ওর সাথে দেখা করেই যায়। ও আবার ঘর থেকে বের হতে চাচ্ছিল না কারণ তখন প্রবাহ প্রবল অনেক শীত। আমার কথায় হার মেনে ওকে আমি ঘর থেকে বের করে নিয়েই আসলাম। ঠান্ডা ভাব দূর করার জন্য চা খেয়ে কিছুক্ষণ চায়ের দোকানে আড্ডা দিলাম। নানান রকম কথা বলতেছি মনটাকে ভাল করার জন্য। তবে চায়ের দোকানে আড্ডা ভাল না জমাই চলে গেলাম ডিসি হিল-এ। বেশ নিরিবিলি জায়গা। দেখতেছি কয়েকটা জুটি বেশ আড্ডাই দিচ্ছে। কেউ কেউ মোবাইল নিয়ে কথা বলছে। দেখে যা মনে হল তা স্বাভাবিক কথা না, প্রেম করছে মুঠোফোনে। এসব দেখে মনটা বেশ অন্য রকম ফুরফুরাই হয়ে গেল। কি আজব পরিবেশ! শীত পড়তেছে তার প্রতি কোন খেয়ালি নেই। পাশে দেখি ফ্লাক্স নিয়ে চা ওয়ালা চাঁ চাঁ করছে। কিছু দূর দেখি বাদাম ওয়ালা চেরাকের আগুন দিয়ে বুট বাদাম বিক্রি করছে। ওকে বললাম, চল বুট বাদাম খাই। ও আবার অনীহা প্রকাশ করল। জোর করে বললাম চল খাই। বুট বাদাম কিনে সাথে আরও বেশি আড্ডা জমালাম। আড্ডা দিচ্ছি ঠিকই, কিন্তু চোখ আমার সবখানে। কে কি করতেছে না করতেছে লক্ষ্য করতেছি। দেখি একটা দম্পতি তার মেয়েকে নিয়ে ডিসি হিল-এ মঞ্চে থাকা জায়গায় বসে তারা তারা কথা বলছে। আবার একটা ছেলে একটা মেয়ের হাত ধরে হাঁটাহাঁটি করছে। হঠাৎ দেখি একটা মেয়ে গেইট দিয়ে ঢুকে একলা একলা কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করতেছে। ওর সাথে পাশে কেউ নেই। আমাদের পাশে থাকা বসার জায়গায় কিছু দূরে বসে আছে। মেয়েটার সাথে দেখি আসলেই কেউ নেই। কিন্তু রাত তো হয়েই এল। শীত পড়তেছে, একলা একলা বসে থাকা মানেটা কি? গায়ে কোন শীতের কাপড়ও নেই। সালোয়ারকামিজ পড়া মেয়েটি। চেহারাটা পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে না। আবছা আবছা আলোতে কিছুটা দেখছি। আচ্ছা যাক... নিজের কাজে মন দিলাম। আমার বন্ধু আমার সাথে বকবক করে কথা বলেই যাচ্ছে আমি কোন ওর কথা শুনছি না শুধু দেখছি এদিক-ওদিক। কেউ কেউ দেখছি মুক্ত উদাস মনে সিগারেট টানছে আবার কেউ কেউ দেখছি চলেই যাচ্ছে নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে। প্রায় খালি হয়েই এল জায়গাটা। কিন্তু মেয়েটি বসেই আছে। জায়গাটা আর নিরাপদ না ভেবে বের হয়ে এলাম। কারণ রাত তখন সাড়ে ৯টা। আমার বন্ধুর সাথে রাস্তায় গল্প করে করে এসে ওকে বিদায় দিয়ে আবার আন্দরকিল্লায় আসলাম। আমার বাসা কাপ্তাই রাস্তার মাথা পরে কাজীর হাট ভিতরের গলিতে। ১নং কালুরঘাট বাস ধরতে হবে, কিন্তু এত দূরে বাস পাওয়া মুশকিল। আন্দরকিল্লা জায়গাও দেখি থমথমে। মনে একটা সংশয় হলো অন্য দিন তো এভাবে থাকে না। কিন্তু আজ কেন? এসব কথা চিন্তা করতে করতে চিন্তা বাদ দিয়ে বাস আসার প্রতি মনোযোগ দিলাম। কোনোটা বাস যাচ্ছে না। যাও যাচ্ছে বহদ্দারহাট পর্যন্ত। ভেঙ্গে ভেঙ্গে যাওয়া অনেক কষ্টকর। তাই আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে থাকলাম। কিছুক্ষণ দেখি একটা নতুন বাস কালুরঘাট কালুরঘাট বলে চিৎকার করছে। আবারও মনে সংশয় হলো এত বড় বাস এত রাতে এত সহজে যায়না। বাসটা বেশ নতুন। বাসে উঠে পিছনে সিটে গিয়ে বসতেই দেখি ঐ সেই মেয়েটি যাকে আমি একলা একলা ঘুরাঘুরি করতে দেখেছি ডিসি হিল-এ। কিন্তু ঐ মেয়েটি এই বাসে আসল কিভাবে? এই বাস তো নিউ মার্কেট থেকে আসছে। তাহলে? মনে আমার অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রশ্নেরা আমার কাছে আসছে আর যাচ্ছে। আজব চিন্তারা আমার পাশে এসে বসে আছে। কিন্তু না ভেবে উপায় কি! চিন্তার তো বিষয়! যাই হোক আমি আমার সামনের দিকে ফিরে তাকালাম। বাস ছেড়ে দিয়েছে। আমি বাসের জানালার দিকে তাকিয়ে রইলাম। বাস ড্রাইভার পিছনের দিকে লাইট জ্বালিয়ে দিয়েছে। কিছুক্ষণ পর পর আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছি। বাহ! বেশ সুন্দর মেয়েটি। তখন অন্ধকারে ভালভাবে দেখা যায়নি। বয়স আর কত হবে আনুমানিক ২০/২১ হবে হয়ত। ওর দিকে না চেয়েও পারছি না। বেশ অপরূপ দেখতে। কিন্তু এভাবে থাকিয়ে থাকলে নিশ্চয় অন্য কিছু মনে এনে সন্দেহ করবে। কেমন জানি দেখতে মেয়েটি। একবার থাকিয়ে থাকলে দেখতে অনেক সুন্দর লাগে আবার আরেকবার থাকিয়ে থাকলে মনে হয় অদ্ভুত ধরণের, বিকৃতি চেহারার। ঠিক তাকাতে যেন ভয় হয়। খেয়াল করে দেখি ওর চোখমুখ জ্বল জ্বল করছে। হাতগুলা দেখতেইবা কি রকম। পুরা অদ্ভুত ধরণের। বাস পূর্ণ গতিতে চলছে। আমার তো ঠান্ডায় যায় যায় অবস্থা। গায়ে জ্যাকেট পরেও নিস্তার পাচ্ছি না। কিন্তু মেয়েটি ঠান্ডা সহ্য করছে কিভাবে? মেয়েটির কপালে তাকালে মনে হয় ঘামের বৃষ্টি ঝরছে। এভাবে করতে করতে সব যাত্রী কোন সময় নেমে গিয়ে কমে গেছে টের পাইনি। এত বড় বাসের মধ্যে আমরা চারজন। বাস ড্রাইভার আর কন্ডাকটার। এদিকে আমি আর সেই মেয়েটি। বাইরে থাকিয়ে দেখতেই দেখি কাপ্তাই রাস্তার মাথা চলে এসছি। বাস আর কালুরঘাট যাবে না কারণ কালুরঘাট যাওয়ার মত যাত্রী নেই। বাস থেকে নামতেই দেখি রাস্তার চারিদিকে সব শূণ্য। কেউ কোথাও নেই। কন্ডাকটারকে টাকা দিয়ে আমি মেয়েটির আগে হাঁটা দিলাম। প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইল বের করতেই ঘড়িতে দেখি রাত ১১:৫৮। এত রাত হয়ে গেছে নিজেও বিশ্বাস করতে পারছি না। সামনে দিকে ফিরে থাকাতেই দেখি মেয়েটি কোন সময় আমার আগে ক্রস করে হাঁটা শুরু করে আমার আগে আছে ভাবতেই পারছি না। এত তারাতারি ক্রস করলো কিভাবে! আমি তো মেয়েটির আগেই ছিলাম। অবাক চোখে পিছন দিকে ফিরে তাকাতেই দেখি পিছনে সেই বাসটিও নেই। এত অল্প সময়ে মধ্যে চলে গেল কিভাবে? অন্তত বাসটির ইঞ্জিনের শব্দও তো শুনা যেত। অথচ শুনতেই পেলাম না। আমি আবার সামনের দিকে ফিরে থাকাতেই দেখি মেয়েটির হাঁটা চলা অন্য রকম। ঠিক স্বাভাবিক মেয়েদের মত না। আমি মেয়েটি থেকে ২০ হাত দূরে। ভাল করে খেয়াল করতেই দেখি মেয়েটি থেকে কি যেন আস্তে আস্তে গলে গলে যাচ্ছে। আমি তো বিষণ ভয়ে ভয়ে আছি। কারণ রাস্তার আশে পাশে কোন জনমানব নেই। নিস্তব্ধ জায়গায় শুধু আমি আর মেয়েটি হাঁটছি। হাঁটতে হাঁটতে দেখি মেয়েটি কেমন জানি রূপ পরিবর্তন হচ্ছে। আমি ভূত পেত্নী এসব বিশ্বাস করিনা। কিন্তু আমার চোখের সামনে কি এসব ঘটে যাচ্ছে নিজেই তা বিশ্বাস করতে পারছিনা। আমার মাথা তখন ঝিম-ঝিম করছে। শীতের মধ্যেও আমার শরীরে ঘাম ঝরছে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিনা কারণ আমার আর এক হাতে বইয়ের বোঝা। হঠাৎ চোখের পলকে দেখি মেয়েটি নেই। উধাও হয়ে গেল মেয়েটি। আমি আর হাঁটতে না পেরে চোখমুখে অন্ধকার দেখছি। রাস্তায় পড়ে যাওয়ার মত অবস্থা। আলোকিত রাস্তার স্ট্রেট লাইটও আমাকে আলোকিত করতে পারছে না। সব কিছু যেন স্থির হয়ে আসছে। মনের দম ফুরিয়ে যাবার উপক্রম। আকাশের দিকে তাকাতেই দেখি আকাশে একটা তারাও নেই। সব শূণ্য। আমি নিশ্চুপভাবে ভয়ে ভয়ে আমার বাসার দিকে এগোতে থাকলাম। বাসায় পৌঁছাতে শুকনা জায়গায় একটা পিচ্ছিল আচারও খেলাম। তবে ভাগ্য ভাল পরে যাইনি। বাসায় গিয়ে অন্যকিছু না ভেবে সোজা ঠান্ডা পানি খেতে লাগলাম। ভাবতে লাগলাম আজকে কি হল! যা আমার জীবনে ঘটেনি। কিন্তু মনে আমার এখনো প্রশ্ন। মেয়েটি গেল কোথায়?
Subscribe to:
Post Comments
(
Atom
)
No comments :
Post a Comment