ডাল খেকো জ্বিনদের ঘটনা

ঘটনাটি ১৯৭০-৮০ এর মধ্যে। আমাদের পুরাতন বাড়ি যমুনা নদীর একটা শাখা নদীর তীরে অবস্থিত। সেই বাড়ির পাশে একটা পরিত্যক্ত কালীমন্দির ছিল। মন্দিরের সাথে বিশাল একটা বড়ই গাছ ছিল। আমার বাপ চাচারা ৫ ভাই ৫ বোন। ৩ নাম্বার বোন মানে আমার সেজো ফুফু দুপুরবেলা সেই বরই গাছে উঠছে বড়ই পারার জন্য। তখন সেখানে ডাল রান্নার ঘ্রাণ আসছিল। ডালে বাঘার দিলে যেমন ঘ্রাণ আসে তেমন। আমার ফুফু গাছ থেকে নামতে নিয়ে সেই মন্দিরের ভেতর পরে যায়। পরে গেলেও খুব একটা ব্যাথ্যা পায়নি। সেখান থেকে বাড়ি আসার পর ফুফুর সেইরকম পেটে যন্ত্রণা শুরু হয়। সেই পেট ব্যাথ্যা সারে না। ননস্টপ ব্যাথ্যা। আমার দাদীর একজন আত্নীয় বুজূর্গ ব্যক্তি ছিলেন। 

তিন এসে ঝাড়ফুঁক করে পানি পড়া দেন। সেটা খেয়ে আল্লাহর রহমতে ব্যাথ্যা সেরে যায়। পরে জ্বিন হাজির করে জানা যায় সেখানে ডালখোর জিনেরা থাকে। ফুফু গাছ থেকে পরে গিয়ে নাকি জ্বিনেদের ডালের পাতিল ফেলে দিয়েছিল। সেইজন্য রেগে গিয়ে তারা পেটে যন্ত্রণা দিয়েছিল। ঘটনা এই পর্যন্ত। আমার আব্বা বলে, প্রায় দিনই দুপুর বেলা সেই মন্দিরের ওখানে ডালের ঘ্রাণ পাওয়া যেতো। সেইসময় আশেপাশের বাড়িগুলোতে খোঁজ নিতো কেউ ডাল রান্না করছে কিনা? কেউই ডাল রান্না করেনি তখন। সেই জায়গা এখনও আছে। কিন্তু মন্দিরটা নেই। নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছিল। এখন আবার সেই জায়গা  জনবসতিতে ভরে গেছে।

ডাল খেকো জ্বিনদের ঘটনা

ঘটনাটি এখানেই শেষ নয়। ফুফুর পেটব্যথা সেরে যাওয়ার পর থেকে আমাদের পরিবার সেই জায়গার প্রতি একটু ভয় এবং অনেকটা কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে থাকতো। মন্দিরটা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেলেও, জায়গাটি কোনোভাবে অন্যরকম অনুভূতি জাগাতো।

এরপরের ঘটনা ১৯৮৫ সালের দিকে। আমার বড় চাচা, যিনি খুব সাহসী স্বভাবের ছিলেন, একদিন সন্ধ্যার সময় সেই জায়গার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি দেখলেন, দূর থেকে কার যেন ছায়া মন্দিরের পুরোনো জায়গাটায় বসে আছে। সন্ধ্যার আলো-আঁধারে চাচা ভাবলেন, হয়তো কোনো প্রতিবেশী। কিন্তু কাছাকাছি যেতেই দেখেন, সেই ছায়াটি ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। অদ্ভুত এক গন্ধ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, যেন পুড়ে যাওয়া ডালের মতো।

চাচা ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে পালিয়ে আসেন। পরদিন তিনি বিষয়টি বাড়িতে জানান। দাদী বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আবার সেই বুজুর্গ আত্মীয়কে ডাকেন। বুজুর্গ ব্যক্তি আসার পর জানালেন, জায়গাটি শুধু জ্বিনেদের বাসস্থান নয়, বরং সেখানে একদল ক্ষুধার্ত ডালখোর জ্বিনদের নেতা ছিল, যে এখনও রাগে ফুঁসছে।

বুজুর্গ লোকটি জায়গাটি শুদ্ধ করতে এক বিশেষ রীতির আয়োজন করেন। তিনি সবাইকে বলেন, একটি পাতিলে ডাল রান্না করতে হবে এবং তা ওই জায়গায় রেখে দিতে হবে। রাতভর সেটি ওখানে থাকবে। সকালে গিয়ে দেখা গেল, পুরো পাতিল খালি, শুধু কিছু পোড়া চিহ্ন পড়ে আছে।

সবাই ভাবল, হয়তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। কিন্তু এখানেই মজা। এরপর থেকে পরিবারের কেউই আর ডাল খাওয়ার সময় ঠিকঠাক স্বাদ পেত না। যতই মসলা বা স্বাদ অনুযায়ী রান্না করুক, ডাল সবসময় পানসে লাগতো। যেন সেই ডালখোর জ্বিনেরা শুধু জায়গা নয়, তাদের ডাল খাওয়ার আনন্দও চিরতরে নিয়ে গেছে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
sr7themes.eu.org