ভয়ংকর পুকুর এর সত্যিকারের ঘটনা

আজ থেকে প্রায় ১০-১২ বছর আগের কথা। আমাদের গ্রাম তখন বেশ নিরিবিলি ছিল। শহরের কোলাহল থেকে অনেক দূরে, সবুজে ঘেরা একটি জায়গা। আমাদের বাড়ির বিপরীতে একটি বড় পুকুর ছিল। পুকুরটি এলাকার মানুষের কাছে একটি আকর্ষণীয় জায়গা ছিল। এটি শুধু গোসল করার জন্য নয়, মৎস্যচাষ এবং স্থানীয় ছোটখাটো উৎসবের জন্যও ব্যবহৃত হতো।

ভয়ংকর পুকুর এর সত্যিকারের ঘটনা

সেদিন ছিল এক শুক্রবার। শুক্রবার এলেই আশপাশের মানুষজন এবং দূরবর্তী এলাকার লোকেরা দল বেঁধে পুকুরে আসতো গোসল করতে। শুক্রবারের সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পুকুরের আশপাশে যেনো একটি মেলা বসতো। সেদিনও তেমনই ছিল।

একদল ছেলে এসেছিল পুকুরে গোসল করতে। তারা এসেছিল প্রায় ৪০ মিনিট দূরের একটি এলাকা থেকে। তাদের মধ্যে একটি ছেলে ছিল, যার নাম আর জানা যায়নি, কিন্তু তার ঘটনা সেদিন সবাইকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল।

ছেলেটি ছিল একজন দক্ষ সাঁতারু। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, সাঁতার কাটার সময় সে হঠাৎ পানিতে তলিয়ে যায়। পুকুরের আশেপাশে তখন প্রচুর মানুষ ছিল। চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হয়, কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। অনেকেই ছুটে আসে তাকে বাঁচানোর জন্য, কিন্তু কিছুই করা সম্ভব হয়নি।

ছেলেটির সঙ্গের ছেলেরা বলেছিল, সে হঠাৎ ডুবে যায়। কিন্তু কিছু মানুষ বলেছিল, এটি একটি দুর্ঘটনা নয়, বরং পরিকল্পিত কিছু। কেউ কেউ বলেছিল, ছেলেটির বন্ধুরা দুষ্টামি করতে গিয়ে তাকে পানিতে চেপে ধরেছিল, যা তার মৃত্যুর কারণ হয়েছিল।

তবে আরও ভয়ংকর একটি গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এলাকার প্রবীণরা বলতেন, পুকুরের গভীরে কিছু অদ্ভুত জিনিস ছিল, যা লোককে গভীরে টেনে নিয়ে যেত। কেউ বলতো, এটি বুড়িগঙ্গা নদীর কোনো রহস্যময় স্রোতের অংশ, যা পুকুরটির গভীরে যুক্ত। আবার কেউ বলতো, পুকুরটির মাঝে একটি বিশেষ গভীর পয়েন্ট ছিল, যা মৃত্যুর ফাঁদে পরিণত হয়েছিল।

ছেলেটি ছিল তার মায়ের একমাত্র সন্তান। তার বাবা মারা গিয়েছিল অনেক আগেই। তার মা ছেলেটিকেই নিয়ে বেঁচে ছিল। সেদিন তার মা যখন পুকুরপাড়ে ছুটে এলো, তখন তার কান্না সবার হৃদয় বিদীর্ণ করে দিয়েছিল। সেই হাহাকারের শব্দ যেন পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছিল। আশেপাশের চার-পাঁচটি এলাকা থেকেও মানুষ ছুটে এসেছিল।

পুকুরটি নিয়ে আরও নানা কথা শোনা যেত। একসময় এটি ছিল একটি চাষের জমি, যা পরে খনন করে পুকুরে পরিণত করা হয়। স্থানীয় মানুষজন বলতো, পুকুরটির তলায় কোনো প্রাকৃতিক গভীরতা বা স্রোতের মতো কিছু ছিল, যা অদ্ভুতভাবে লোকজনকে গভীরে টেনে নিত।

সেই ঘটনার পর পুকুরটি নিয়ে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কেউ আর সাহস করে সেখানে সাঁতার কাটতে যেত না। কয়েক বছর পর, পুকুরটিকে মাটি দিয়ে ভরাট করে ফেলা হয়। তবে সেই শুক্রবারের ঘটনাটি আজও এলাকাবাসীর মনে এক দুঃখের স্মৃতি হয়ে বেঁচে আছে।


অনলাইন থেকে ইনকাম
No comments :

No comments :

Post a Comment