লোম হর্ষক ভূতের গল্প চন্দ্রা পর্ব ৪
চন্দ্রা হুট করে আমাদের সামনে আসার ফলে আমরা দুজনেই খুব ভয় পেয়ে গেলাম। ভয়ের চুটে আমার গলা শুকিয়ে যেতে থাকলো। অন্ধকারে ঠিক ভাবে চন্দ্রার মুখটা দেখতে পাচ্ছিলাম না। খুব ভয় পেয়ে আছি। তবুও মনের ভিতরটা চন্দ্রাকে দেখার জন্য কেমন জানি করছে। মনে মনে ভাবলাম যে মেয়েটার সাথে এতো কিছু হয়েছে তাকে একবার দেখি। আমি চন্দ্রাকে দেখার জন্য তার মুখে মোবাইল এর চর্টটা মারলাম। টর্চ মারতেই আমি খুব অবাক হয়ে গেলাম। কী মায়াবী মুখ। তবে চন্দ্রার চোখ দুটো পুরো লাল টুকটুকে ছিলো। আর তার গলায় লম্বা একটা দড়ি পেঁচানো।
আমি বেশ বুঝতে পারলাম এই দড়িটার সাহায্যেই চন্দ্রা আত্মাহত্যা করেছিলো। নমানি ওঝা বললো কী করছো? শিগ্রই টর্চ অফ করো নয়তো ও রেগে যাবে। চন্দ্রা ওর আসল মুখ কাউকে দেখায় না। ঠিক একটু পর ই চন্দ্রা ভয়ংকর ভাবে চিৎকার করতে থাকলো। আর আস্তে আস্তে সে নিস্তেজ হতে শুরু করলো। আমি বুঝতে পারছিলাম না কী এমন হলো হঠাৎ যে চন্দ্রা এমন করছে? নমানি ওঝা আমার কাঁধে হাত রেখে বললো এ যাত্রায় বোধ হয় বেঁচে গেলাম। নিশ্চয়ই বাইরে পূর্ণ সূর্য গ্রহন শুরু হয়েছে। যার জন্য আজকের দিনের জন্য চন্দ্রা তার শক্তি হারাচ্ছে। নমানি ওঝা আমাকে বললো জুনায়েত তোমার স্ত্রী নীলাকে কাঁধে তুলে নাও। আর তারা তারি পালাতে হবে এখান থেকে চন্দ্রা তার শক্তি ফিরে পাওয়ার আগেই। আমি নীলাকে আমার কাঁধে তুলে নিলাম। আর গুহা থেকে আমরা বেরিয়ে এলাম। গুহা থেকে বেরিয়ে আসার আগে আমরা একটা মমি দেখতে পেলাম।
নমানি ওঝা বললো এটা হলো চন্দ্রার দেহো। যে টাকে মমি করে রাখা হয়েছে প্রায় একশত বছর ধরে। আমরা তারা তারি বাইরে বেরিয়ে এলাম। আর এসে দেখি সত্যি পূর্ণ সূর্য গ্রহন চলছে। আস্ত সূর্য টাকে কেউ গ্রাস করছে। ওঝা সাহেব আমাকে বললো তোমরা আমার সাথে আমার আস্তানায় চলো। সেখানে গিয়ে আগে তোমার স্ত্রী নীলার ঘুম ভাঙ্গাতে হবে। আমি ওঝার পিছন পিছন তার আস্তানায় চলে আসলাম। আস্তানায় এসেই ওঝা বললো তোমার স্ত্রী কে মাটিতে শুয়িয়ে দাও। আমি আমার স্ত্রী নীলাকে মাটিতে শুয়িয়ে দিলাম। তার পর ওঝা কী যেন মন্ত্র পাঠ করছে। তার পর একটা মন্ত্রপূত লোহার চাকতি আমার স্ত্রীর কপালে চেপে ধরলো। আমি দেখতে পেলাম ওই লোহার চাকতি আমার স্ত্রীর শরীর থেকে কিছু ধোঁয়ার মতো শোষণ করছে। আমি নমানি ওঝাকে জিজ্ঞেস করলাম কী করছেন এসব? ওঝা বললো তোমার স্ত্রীকে ঘুম পারিয়ে রেখেছিলো চন্দ্রা। তার ভিতরের সমস্ত ঘুম বের করে নিতে হবে। একটু পর আমি খেয়াল করলাম আমার স্ত্রী নীলা একটু একটু করে চোখ খুলছে। তার মানে তার সমস্ত ঘুম কেটে গেছে।
নীলা জেগেই জিজ্ঞেস করলো এ আমি কোথায়? আমি নীলাকে বললাম আপনি একটু শান্ত হউন। নীলাকে আমি সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম। আর আমাদের সাথে কী কী ঘটেছে তার সব কিছু ও বললাম তাকে। নীলা সব কিছুই বুঝতে পারলো আর বিশ্বাস ও করলো। নমানি ওঝা আমাকে বললো জুনায়েত আমাদের কপাল খুব ভালো যে আমরা চন্দ্রার আস্তানা থেকে বেঁচে ফিরেছি। কারন আমি বই এ পড়েছি মানুষ চন্দ্রার আস্তানায় ঢুকে নিজের ইচ্ছায় কিন্তু বের হয় চন্দ্রার ইচ্ছাতে। আমি নমানি ওঝাকে জিজ্ঞেস করলাম চন্দ্রা আমাদের পিছনে পরলো কেনো? নমানি ওঝা বললো আমার এতোদিনের সাধনা বলছে তুমি নিশ্চয়ই ওই রুদ্রের বংশধর। চন্দ্রাকে বন্দী করার পর সে তার প্রতিশোধ নিতে পারেনি। আর এতোদিনে রুদ্র মারা গেছে। তাই চন্দ্রার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য রুদ্রের আগত বংশ ধরের উপর প্রতিশোধ নিচ্ছে। আমি ওঝাকে বললাম যদি আমাদের থেকে চন্দ্রা প্রতিশোধ নিতেই চায় তাহলে আমাকে বাসর ঘরেই তো মেরে ফেলতে পারতো কিন্তু তা করলো না কেন? নমানি ওঝা বললো আমি নথিতে দেখেছি চন্দ্রা তার সন্তান কে এই পৃথিবীতে আনবে। আর তার সন্তান ই সব প্রতিশোধ নেবে। তাই তার সন্তান পৃথিবীতে ভূমিষ্ট হওয়ার আগ পর্যন্ত তোমাকে বা তোমার পরিবারের কাউকে কিছুই করবে না। তুমি দেখোনি চন্দ্রা তোমার পরিবারের কাউকে না মেরে বাইরের দুজন মানুষ কে মেরে তাদের রক্ত গ্রহন করেছে।
নমানি ওঝা বললো একটা বিষয় আমার মাথায় ঢুকছে না। চন্দ্রার ঘুমটা ভাঙ্গালো কে? এবার আমার খুব ভয় হতে লাগলো। আমি নমানি ওঝাকে জিজ্ঞেস করলাম আচ্ছা চন্দ্রার সন্তান যদি সত্যি পৃথিবীতে চলে আসে তাহলে কী হবে। ওঝা সাহেব বললো সেটা হবে খুব ভয়ানক একটা বেপার। আমি আমার গুরুর থেকে জেনেছি চন্দ্রার সন্তান হবে চন্দ্রার থেকে আর দশ গুন ভয়ানক এবং শক্তিশালী। এবার আমি কাঁদো কাঁদো হয়ে বললাম কোন উপায় কী নেই এই চন্দ্রা আর তার সন্তান এর হাত থেকে বাঁচার? ওঝা বললো হ্যা আছে। চন্দ্রার সন্তান কে এই পৃথিবীতে আসা থেকে আটকাতে হবে। তাকে নষ্ট করতে হবে। আমি বললাম কী ভাবে নষ্ট করবো বলুন? আর আমরা কী ভাবেই বুঝবো চন্দ্রার সন্তান পৃথিবীতে কবে আসবে? নমানি ওঝা বললো প্রকৃতি আমাদের জানিয়ে দেবে। কারন সত্যি যদি চন্দ্রার সন্তান পৃথিবীতে আসে তাহলে সেটা হবে প্রকৃতি বিরোধী কাজ।
তাই প্রকৃতি আমাদের জানিয়ে দেবে। আমি বললাম সব ই তো ঠিক আছে কিন্তু চন্দ্রার সন্তান কে কী করে পৃথিবীতে আসা থেকে আটকাবো। নমানি ওঝা বললো গুহার ভিতরে যে মমিটাকে তোমাকে দেখিয়ে ছিলাম সামনের আমাবস্যাতে সেটাকে ধংস্ব করতে হবে। কারন ওই মমিকে জীবন্ত করেই চন্দ্রা তার সন্তান কে পৃথিবীতে আনবে। আমি বললাম ঠিক আছে তাহলে তাই হবে। এই বলে আমি আর নীলা বাড়ি ফিরে এলাম। নীলাকে দেখে বাড়ির সবাই তো খুব খুশি। কারন নীলার পেট টা আর আগের মতো ফুলা নেই। কিন্তু আসল ঘটনা তো আমি আর নীলা ছাড়া কেউ ই জানে না। আমি বাবাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম আচ্ছা বাবা আমরা কী কোন রাজ বংশের লোক। বাবা বললো হ্যা। আমি যতদূর শুনেছি আমাদের বংশের শেষ রাজা ছিলো নাকি রুদ্র নামের একজন লোক। তার দুই দিন পরের কথা। আজকে হলো আমাবস্যা। আমি আর নীলা চলে গেলাম নমানি ওঝার আস্তানায়। গিয়েই দেখলাম ওঝা সব কিছু গুছিয়ে রেখেছে। আমাকে বললো তুমি এখনি বেরিয়ে পরো নয়তো দেরি হয়ে যাবে। আমি নীলাকে বললাম চলো আমার সাথে। ওঝা বললো নীলা না তোমাকে একাই যেতে হবে। নীলা এখনেই থাকুক। আমি গুহার উদ্দেশ্য বেরুনোর আগে ওঝা আমাকে একটা তাবিজ দিয়ে বললো এটা সাথে রেখো তাহলে চন্দ্রার তোমার থেকে দুরে থাকবে। আমি গুহার জন্য বেরিয়ে পরলাম।
সন্ধ্যার দিকে গুহার সামনে পৌঁছে গেলাম। আমি সাহস করে গুহার ভিতরে ঢুকে পরলাম। ঢুকেই ওই মমিটার কাছে চলে গেলাম সেটা নষ্ট করার জন্য। ঠিক তখনি সেখানে চন্দ্রা চলে আসলো। আর আমাকে ওখান থেকে ছুড়ে ফেলে দিলো। আমি পাথরের সাথে গিয়ে ধাক্কা খেলাম আর জ্ঞান হারালাম। অনেক টা সময় পার হয়ে গেলো। আমি ফিরলাম না তাই কবিরাজ আর নীলা সিদ্ধান্ত নিলো আমাকে খুজার জন্য তারা গুহার উদ্দেশ্যে যাবে। যাওয়ার আগে নমানি ওঝা নীলাকেও একটা তাবিজ দিয়ে বললো এটা সাথে রাখো। নীলা আর ওঝা গুহায় আসার জন্য বেরিয়ে পরলো। তারা যখন জঙ্গলের ভিতরে আসলো তখন প্রকৃতি খারাপ হতে শুরু করলো। আকাশ অন্ধকারে ঢেকে গেলো। ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাতে শুরু করলো। ওঝা নীলাকে বললো নীলা সর্বনাশ হয়ে গেছে। আমার মনে হয় জুনায়েত চন্দ্রার মমি নষ্ট করতে পারেনি। চন্দ্রার সন্তান বোধ হয় পৃথিবীতে এসে পরেছে। নীলা জিজ্ঞেস করলো আপনি কী করে বুঝলেন? ওঝা বললো প্রকৃতি আমাকে বলে দিচ্ছে। তারা তারি চলো নয়তো জুনায়েত এর বিপদ হতে পারে। নীলা আর ওঝা গুহার কাছে এসে পরলো আর তারা ভিতরে ঢুকে ও পরলো। ভিতরে ঢুকেই তারা দেখলো আমি জুনায়েত মাটিতে পরে আছি। আর মমিটার পাশে একটা বাচ্চা মেয়ে বসে আছে। ওঝা খুব ভয় পেয়ে গেলো এই ভয়নক জায়গায় বাচ্চা এলো কোথা থেকে। সে জিজ্ঞেস করলো এই মেয়ে কে তুমি? এখানে কী করছো? মেয়েটা এবার তাদের দিকে লাল চোখে তাকালো আর বড় বড় দাঁত বের করে চেচিয়ে বললো আমি চন্দ্রার মেয়ে ইরাবতী।
লোম হর্ষক ভূতের গল্প চন্দ্রা পর্ব ৫
No comments :
Post a Comment