লোম হর্ষক ভূতের গল্প চন্দ্রা পর্ব ৫
আমি চন্দ্রার মেয়ে ইরাবতী। মেয়েটার মুখে এমন কথা শুনে নীলা আর নমানি ওঝার চোখ কপালে উঠে গেলো। নমানি ওঝা শুধু চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে কিছু বলছে না। তবে নীলার একটা বিষয় মাথাতে কোন ভাবেই ঢুকছে না। এই পিচ্চি মেয়েটা কী করে এতো ভয়ানক হবে আর কী করেই বা প্রতিশোধ নেবে? ঠিক সেই সময় নীলা আর নমানি ওঝা সেখানে চন্দ্রার উপস্থিতি টের পেলো। চন্দ্রা সেই মমিটার পিছন থেকে খুরিয়ে খুরিয়ে হেঁটে হেঁটে আসতেছে। আর চন্দ্রা আমাদের মাঝে এসেই একটা অট্টহাসি দিয়ে বলে উঠলো আমার লক্ষ পূরন হয়েছে। এই দেখো আমার মেয়ে পৃথিবীতে এসে গেছে।
এখন আমাকে প্রতিশোধ নেওয়া থেকে কে আটকায়? এখন শুধু একটু সময়ের ব্যাপার। কাউকে বাঁচতে দেবো না আমি। আমার মেয়ে তোদের সবাইকে মেরে ফেলবে হা হা। তার পর চন্দ্রা তার মেয়েকে ডাকলো আর বললো চলে আয় ইরাবতী। সময় হউক ওদের মৃত্যুর প্রহরের। এই কথা বলেই চন্দ্রা গুহার ভিতরের দিকে যেতে থাকলো আর তার পিছন পিছন তার মেয়ে ইরাবতী ও। নীলা তো খুব অবাক হলো এতো কিছু হয়ে গেলো নমানি ওঝা কিছু বলছে না শুধু চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে। চন্দ্রা আর তার মেয়ে অন্ধকারে নিমিষেই হারিয়ে গেলো। ওঝা নীলাকে বললো জুনায়েত কে নিয়ে আমার আস্তানায় চলো। এখানে থাকাটা আমাদের জন্য নিরাপদ না।
নীলা আর নমানি ওঝা মিলে আমাকে নমানি ওঝার আস্তানায় নিয়ে চলে এলো। আমার যখন জ্ঞান ফিরলো আমি তখন দেখতে পেলাম নমানি ওঝা আর নীলা মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে আমার পাশে বসে আছে। আমার জ্ঞান ফিরতেই আমি জিজ্ঞেস করলাম আমি কোথায়? নমানি ওঝা বললো ভয় এর কিছু নেই তুমি নিরাপদ আছো। তুমি আমার আস্তানায় আছো। আমি নমানি ওঝাকে জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে আপনারা দুজন এ ভাবে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন কেনো? নমানি ওঝা কাঁপতে কাপঁতে বললো সর্বনাশ হয়ে গেছে জুনায়েত। আমি জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে বলবেন তো? চন্দ্রার মমি তুমি নষ্ট করতে ব্যার্থ হওয়ার ফলে চন্দ্রার মেয়ে এই পৃথিবীতে এসে পরেছে। কথাটা শুনে আমার হার্টবিট বেড়ে গেলো। গলাটাও কেমন জানি শুকিয়ে আসতে শুরু করলো।
আমি নীলাকে বললাম আমাকে এক গ্লাস পানি খাওয়াও। নীলা আমাকে এক গ্লাস পানি এনে দিলো। আমি পানি খেতে খেতে নমানি ওঝাকে বললাম এখন কী হবে ওঝা সাহেব? বাঁচার কী আর কোন রাস্তা নেই? ওঝা সাহেব বললো আমি আর কিছুই বলতে পারছি না। এখন একমাত্র একটাই রাস্তা খুলা আছে। কে চন্দ্রাকে জাগালো তাকে খুজে বের করতে হবে। কারন একমাত্র সে ই জানে চন্দ্রাকে ও তার মেয়ে ইরাবতী কে কী ভাবে ধংস্ব করতে হবে। এর ই মধ্যে নীলা বললো ওঝা সাহেব আমার একটা বিষয় জানার আছে। ওঝা বললো হুম বলো। আচ্ছা আজ গুহার মধ্যে আমাদের তিন জন কে চন্দ্রা ও তার মেয়ে একা পেয়ে ছেড়ে দিলো কেনো? ও তো ওখানেই আমাদের মেরে ফেলতে পারতো। ওঝা বললো চন্দ্রার মেয়ে আজ সবেমাত্র পৃথিবীতে এসেছে। আর তাকে পূর্ণ শক্তিশালী করতে একটু সময় লাগবে চন্দ্রার। চন্দ্রার মেয়েকে চন্দ্রা তার থেকে ১০ গুন বেশি শক্তি শালী করে গড়ে তুলবে। আর তার পর ই সে তার প্রতিশোধ নেবে। এই ধরো আজকের দিন সহ মোট তিন দিন লাগবে। নীলা বললো তার মানে আর তিনদিন সময় রয়েছে আমাদের হাতে? নমানি ওঝা বললো হুম একদম ঠিক বলেছো।
এবার আমি নমানি ওঝাকে বললাম কিন্তু চন্দ্রাকে কে জাগালো সেটা কী করে জানবো? ওঝা বললো সেটা চন্দ্রা নিজে বলবে। মানে তাকে দিয়ে বলাতে হবে। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম এটা কী করে সম্ভব? চন্দ্রা তো আমাদের মেরে ফেলার জন্য উঠে পরে লেগেছে সে কেনো বলবে? নমানি ওঝা বললো আজ রাতে চন্দ্রাকে আমি আমার তপস্যার মাধ্যমে ডাকবো। তাকে আসতেই হবে। সে আসবে আমি জানি। আমি নমানি ওঝাকে বললাম যা করার তারা তারি করুন হাতে বেশি সময় নেই। রাতের বেলা সব আয়োজন করলো নমানি ওঝা। তিনি ইয়া বড় গোল চাকার মতো কিছু একটা মেঝেতে রাখলো গাড়ির চাকার মতো। আর তার ভিতরে অনেক মন্ত্র লিখা ছিলো। তিনি সেই বস্তুর ভিতরে মোমবাতি রাখলো। আর তার আস্তানার সমস্ত লাইট অফ করে দিলো। আর তিনি মন্ত্র পড়তে শুরু করে দিলো। তিনি বার বার বলছে চন্দ্রা আয়। চন্দ্রা আয়। তোকে আসতেই হবে। একটু পর আস্তানাটা কাঁপতে শুরু করলো। আমি বুঝতে পারলাম চন্দ্রা আসছে। হঠাৎ মোমবাতিটা নিভে গেলো।
আর চন্দ্রা ভয়ংকর ভাবে চিৎকার দিয়ে বললো আমাকে ডেকে ভুল করছিস। আমার মেয়ে তোদের বাঁচতে দেবে না। ওঝা বললো বাঁচা মরা সব উপর ওয়ালার হাতে তুই কিছুই করতে পারবি না। আগে বল তোর ঘুম কে ভাঙ্গিয়েছে। চন্দ্রা বললো আমি বলবো না। ঠিক তখন ওঝা আর জোরে জোরে কী যেনো পড়তে শুরু করলো। আর চন্দ্রা তখন ছটফট করা শুরু করলো আর বাধ্য হয়ে বললো আমার ঘুম ভাঙ্গিয়েছে বিশু। এবার নমানি ওঝা চন্দ্রাকে ছেড়ে দিলো। আর ঘরের লাইট গুলো জ্বালিয়ে দিলো। আর বললো বিশু কেনো এই চন্দ্রার ঘুম ভাঙ্গালো? আর বিশু কী করেই বা চন্দ্রার কথা জানতে পারলো। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম এই বিশু আবার কে? নমানি ওঝা বললো বিশু হলো একজন বিখ্যাত হিন্দু তান্ত্রিক। নমানি ওঝা আমাকে আশ্বাস দিয়ে বললো তোমরা ভয় পেও না। আমি বিশুর আস্তানায় চিনি। তোমরা আমার সাথে চলো। একমাত্র বিশুই বলতে পারবে কী করে এই চন্দ্রা আর তার মেয়ের হাত থেকে বাঁচা যাবে কী করে তাদের ধংস্ব করতে হবে।
আমরা সবাই বিশুর আস্তানায় চলে গেলাম। আস্তানায় গিয়ে আমরা আরো বেশি অবাক হলাম। আস্তানায় গিয়ে বিশুর এক শিষ্যের কাছ থেকে জানতে পারলাম এক সপ্তাহ আগে কেউ একজন বিশুকে খুব ভয়ংকর ভাবে মেরে ফেলেছে। ওঝা বললো চন্দ্রার ঘুম ভাঙ্গানেোর পর পর ই চন্দ্রা ওকে মেরে ফেলেছে আমি নিশ্চিত। এবার আমি মাটিতে বসে পরলাম আর বললাম আর কোন রাস্তা তাহলে নেই। ওঝা বললো ভেঙ্গে পরো না। এখানে খুজে দেখো চন্দ্রা আর তার মেয়েকে ধংস্বের উপায় ঠিকই আছে। আমরা খুজতে শুরু করলাম। আর হঠাৎ আমার চোখের সামনে একটা বই পরলো আর বই এর নাম ইরাবতী। আমি নমানি ওঝাকে বললাম এই দেখুন এটা কীসের বই?
নমানি ওঝা বইটা দেখে বললো এই তো পেয়ে গেছি। এই বইটাই তো খুজ ছিলাম। এটার কথা শুনেছি কিন্তু এটা যে সত্যি আছে তা আজ বিশ্বাস হলো। তার মানে ওই বড় তান্ত্রিক ভবিষ্যতের কথাও বলে গিয়েছে। এই বইয়েই চন্দ্রার মেয়েকে ধংস্ব করার সব উপায় ই পেয়ে যাবো। তার পর আমরা সবাই নমানি ওঝার আস্তানায় চলে আসলাম। আর আসতেই নমানি ওঝা বইটা পড়তে শুরু করলো। আর অনেক ক্ষন পরার পর ওঝা বললো পেয়ে গেছি চন্দ্রা আর তার মেয়েকে ধংস্ব করার উপায়। আমি জিজ্ঞেস করলাম বলুন কী সেই উপায়? ওঝা বললো তোমার স্ত্রী নীলার পেটে আসবে এমন একজন মেয়ে যে হবে চন্দ্রার মেয়ে ইরাবতীর থেকেও শক্তি শালী। যে চন্দ্রা আর তার মেয়ে ইরাবতীর হাত থেকে তোমাকে আর তোমার পরিবারের সবাই কে বাঁচাবে।
লোম হর্ষক ভূতের গল্প চন্দ্রা পর্ব ৬
No comments :
Post a Comment