লোম হর্ষক ভূতের গল্প চন্দ্রা পর্ব ৬

নীলার পেটে আসবে এমন একজন শক্তি শালী বাচ্চা যে তোমাকে আর তোমার পরিবারের সবাইকে বাঁচাবে। নমানি ওঝার মুখে এমন কথা শুনে নীলা আর আমি খুব অবাক হলাম। আমি হেসে বললাম ওঝা সাহেব আপনি কী খেপেছেন? নাকি পাগল হয়েছেন? নীলা একটা সাধারণ মানুষ। তার পেটে এতো শক্তিশালী বাচ্চা আসবে কী করে? আর আমাদের হাতে সময় আছে মাত্র তিন দিন। এই তিন দিনের মধ্যে বড় হবেই বা কী করে বাচ্চা টা? ওঝা বললো তুমি পুরো কথাটা না শুনেই কথা বলছো কেনো? আগে আমার কথাটা তো শুনো। 

আমি বললাম আচ্ছা ঠিক আছে বলুন কী বলবেন আপনি। নমানি ওঝা আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো শুনো আমি জানি তিন দিনের মধ্যো একটা বাচ্চা জন্ম নেওয়া এবং প্রতিশোধ নেওয়া সম্ভব নয়। কারন এটা কোন সাধারণ মানুষ করতে পারবে না। তাতে প্রকৃতি বিরোধী কাজ হবে। কিন্তু এই একই বিষয় যদি তুমি আত্মাদের  বেলায় দেখো তাহলে এটা সম্ভব। যেটা চন্দ্রা করে দেখিয়েছে। চন্দ্রা তার সন্তান কে মাত্র তিন দিনের মধ্যেই পৃথিবীতে এনে পরেছে।  আমি বললাম সবই তো বুঝলাম কিন্তু নীলার পেটে ওই শক্তি শালী বাচ্চাটা আসবে কী করে? নমানি ওঝা বললো এর জন্য  আগে আমাদের চন্দ্রার মমি টাকে চুরি করতে হবে এবং চন্দ্রার মমির ভিতরে নীলার আত্বাকে প্রতিস্হাপন করতে হবে। 

তার পর শুভ আত্মাদের ঢেকে তাদের শুভ শক্তি দিয়ে এই অল্প সময়ে নীলার পেটে ওই বাচ্চাটাকে আনতে হবে এবং তাকে শক্তি শালী করে গড়ে তুলতে হবে। আমি নমানি ওঝাকে বললাম আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না ওঝা সাহেব। ওঝা বললো আমরা চন্দ্রার মমিটাকে দেহো হিসাবে ব্যাবহার করে তার ভিতরে তোমার স্ত্রী  নীলার আত্মাকে ঢুকিয়ে সেই শক্তি শালী বাচ্চাকে এই পৃথিবীতে আনবো। এবার আমি সব বুঝতে পারলাম। নমানি ওঝা আমাকে বললো আর একটা জিনিস এর দরকার হবে এই অসম্ভব কাজটা করতে। আমি বললাম কী জিনিস?  নমানি ওঝা বললো চন্দ্রার মাথার একটা চুল। আমি বললাম চন্দ্রার মাথার একটা চুল কেনো? নমানি ওঝা বললো ওই মমিটার মাথায় ওই চুলটা রেখেই সব কিছু করতে হবে। নয়তো চন্দ্রা ও তার মেয়ে ইরাবতী সব জেনে ফেলবে। আমি খুব চিন্তায় পরে গেলাম। এখন চুল কোথায় পাবো চন্দ্রার। পরক্ষনেই আমার মনে পরে গেলো চন্দ্রা তো আমার সাথে আমার রুমে ছিলো দুই দিন। হয়তো  ওখানে খুজলে নিশ্চয়ই ওর একটা চুল পাওয়া যাবে। আমি নীলা আর ওঝাকে বললাম আমি বাড়ি থেকে ঘুরে আসছি। আপনারা এখানেই থাকুন। নিশ্চয়ই ওখানে  চন্দ্রার একটা চুল ঠিকই পাওয়া যাবে। আমি বাড়ির উদ্দেশ্য বেরিয়ে পরলাম। আর বাড়িতে আসতেই আমি তন্ন তন্ন করে চুল খুজতে  থাকলাম। মা আমার রুমে এসে জিজ্ঞেস করলো কীরে জুনায়েত সারা দিন কোথায় থাকিস? আর নীলাই বা কোথায়? এতো তন্ন তন্ন করে কী খুজতেছিস? আমি বললাম  চন্দ্রার চুল। 

মা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো চন্দ্রার চুল মানে? আমি বললাম ইয়ে মানে কিছু না মা। তুমি এতো কিছু বুঝবে না। আমি খুজতে খুজতে কয়েকটা চুল আয়নার সামনে দেখতে পেলাম। আর বললাম এইতো পেয়ে গেছি। আমি এখানে চন্দ্রাকে চুল আঁচড়াতে দেখেছি। আমি চুল গুলো নিয়ে নমানি ওঝার আস্তানায় চলে আসলাম। আর এসেই নমানি ওঝার হাতে দিয়ে বললাম এই দেখুন চন্দ্রার চুল পেয়ে গেছি। নমানি ওঝা বললো চলো চন্দ্রার আস্তানায় যেতে হবে ওর মমিটাকে চুরি করে আনতে হবে। আমি বললাম ঠিক আছে চলুন তাহলে। আমরা নীলাকে ওখানে রেখে বেরিয়ে পরলাম মমিটা আনতে। আমি আর নমানি ওঝা চন্দ্রার আস্তানায় ঢুকে পরলাম। আমি খুবই ভয়ে ছিলাম। নমানি ওঝা বললো ভয়ের কিছু নেই জুনায়েত। চন্দ্রা এখন এখানে আসবে না। সে তার মেয়েকে পূর্ণ শক্তিতে পরিনত করতে ব্যাস্ত। এই সুযোগ এ মমিটাকে চুরি করতে হবে। আমি আর নমানি ওঝা মমিটার কাছে এগিয়ে গেলাম। 

সাদা একটা কাপড়ে মমিটা মুড়ানো ছিলো। চারপাশটা কাঁচের দেয়াল করা। আমরা দুজন কাঁচের দেয়ালটা ভেঙে ফেললাম। আর নমানি ওঝা বললো তুমি পায়ে ধরো আমি হাতে ধরে মমিটাকে নিয়ে চলো। আমরা যেই মমিটাকে ওখান থেকে তুললাম ঠিক তখনি চারপাশ টা কেমন জানি করতে শুরু করলো। বাতাস বয়তে শুরু করলো জোরে আর বিদ্যুৎ ও চমকাচ্ছিলো। নমানি ওঝা বললো ভয় পেও না প্রকৃতির বিরুদ্ধে কাজ করতে যাচ্ছি তাই প্রকৃতি একটু ক্ষেপেছে। আমরা দুজন চন্দ্রার মমি টাকে নিয়ে নমানি ওঝার আস্তানায় চলে আসলাম। আর এসে দেখলাম নীলা আমাদের অপেক্ষায় বসে আছে। নমানি ওঝা বললো  এই মমিটাকে মেঝের মাঝখান বরাবর রাখো। আমরা মমিটাকে মেঝের মাঝখান বরাবর রাখলাম। নমানি ওঝা বললো নীলা তুমি মমিটার পাশে শুয়ে পরো। নীলা চন্দ্রার মমিটার পাশে শুয়ে পরলো। নমানি ওঝা আমার দেওয়া চুল গুলো ওই মমিটার মাথার উপরে রাখলো। আর তারপর নমানি ওঝা  কী যেন মন্ত্র পাঠ করতে থাকলো মনে মনে। 

তার পর সে নীলার মাথায় হাত রাখলো। আর হাত টা রাখতেই নীলা যেন ঘুমিয়ে পরলো। এবার নমানি ওঝা জোরে জোরে মন্ত্র গুলো উচ্চারন করতে থাকলো। আর হঠাৎ আমি দেখতে পেলাম নীলার শরীর থেকে ছায়ার মতো কিছু একটা বেরিয়ে এলো আর ওই মমিটার ভিতরে ঢুকে পরলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম ওঝা সাহেব কী হলো এটা? ওঝা বললো নীলার আত্মা মমিটার ভিতরে ঢুকে পরেছে। এবার শুভ আত্মাদের ডাকার পালা। তিনি লাইট অফ করে দিলো। আমি নমানি ওঝাকে জিজ্ঞেস করলাম ওঝা সাহেব আমার স্ত্রী নীলার কোন ক্ষতি হবে না তো? ওঝা বললো না কোন ক্ষতি হবার কথা না। আর ক্ষতি হলেও তো কিন্তু করার নেই। কারন আমাদের হাতে এটা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। ভয়ের চুটে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে একদম কাপতে থাকলো। 

এবার নামানি ওঝা চিৎকার দিয়ে ডাকতে থাকলো আসো শুভ শক্তিরা আসো। এই অশুভ শক্তির হাত থেকে আমাদের রক্ষা করো। এসো এসো। এই মেয়েটার মাঝে একটা শুভ শক্তির জন্ম দাও তোমাদের শক্তি দিয়ে। একটু পর চার পাশটা কেমন জানি কাঁপতে থাকলো। আর আমি খেয়াল করলাম নীলার আর ওই মমিটার চার পাশে অনেক গুলো ছায়া গোল করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি বেশ বুঝতে পারলাম ওঝা যে সমস্ত শুভ আত্মাকে এতক্ষণ ডাকছিলো এরাই ওরা। ওই ছায়া গুলো এবার তাদের হাত একে একে ওই মমিটার কপালে রাখতে শুরু করলো। আর আমি দেখলাম মমিটার সারা দেহ আলোকিত হয়ে গেছে। বোধ হয় তারা তাদের শক্তি ওই মমিটার ভিতরে দিচ্ছে। আবার এ দিকে নীলার দেহটাও ছটফট করতে শুরু করেছে। আমি নীলার পাশে এসে বসলাম। 

এবার নমানি ওঝা আমাকে ডেকে বললো জুনায়েত এই দেখো নীলার বাচ্চা আসছে। আমি দৌড়ে গিয়ে দেখতে পেলাম চন্দ্রার সেই মমিটার পেটটা আস্তে আস্তে ফুলতে শুরু করলো। তার মানে সত্যি আরো একটা বাচ্চা এই পৃথিবীতে আসতে চলেছে।

লোম হর্ষক ভূতের গল্প চন্দ্রা পর্ব ৭

রেসিপি দেখুন
No comments :

No comments :

Post a Comment