লোম হর্ষক ভূতের গল্প চন্দ্রা পর্ব ৭

ওই মমিটার পেটটা আস্তে আস্তে ফুলে যেতে শুরু করলো। এ দৃশ্য আমি নিজ চোখে দেখছি এটা আমার বিশ্বাস ই হচ্ছে না। ওই ছায়া গুলো তাদের শক্তির সাহায্যে ওই মমিটার পেটে বাচ্চাটাকে এনেছে। এবার মমিটার সারা শরীর একদম আলোয় আলোকিত হয়ে গেলো। আর সেই আলো  মমিটার ভিতর থেকে এসে নীলার দেহে প্রবেশ করলো। নমানি ওঝা বললো জুনায়েত  আমরা আমাদের লক্ষ্য পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি। এই দেখো মমিটার ভিতর থেকে বাচ্চাটা বের হয়ে নীলার পেটে এসেছে। এই বাচ্চাটাই চন্দ্রা আর তার মেয়েকে ধংস্ব করে তোমাদের বাঁচাবে। 

আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম বাচ্চাটা নীলার পেটে আসলো ঠিক আছে কিন্তু এই বাচ্চাটা বড় হবে কী করে এবং শক্তিশালী হয়ে জন্মই বা নিবে কী করে? নমানি ওঝা বললো কাল আবার ওই শুভ আত্মা গুলো আসবে এবং  এই বাচ্চাটাকে নীলার পেট থেকে  তাদের সাথে নিয়ে যাবে এবং বড় করে পূর্ণ শক্তি শালী করে ফিরিয়ে দিয়ে যাবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম আর আমার স্ত্রী নীলার কী হবে? ওঝা বললো কাল যখন ওই শুভ আত্মা গুলো এই বাচ্চা টাকে নিয়ে যাবে ঠিক তার পর ই তোমার স্ত্রীর জ্ঞান ফিরে আসবে। আজ তুমি এখানেই থেকে যাও। পরের দিন রাতের বেলা নমানি ওঝা সেই শুভ শক্তিদের আবার ডাকার ব্যাবস্হা করলো। 

নমানি ওঝা একটা গোল বৃত্ত টেনে তার ভিতরে নীলাকে রাখলো। তার পর শুভ শক্তি গুলোকে ডাকতে শুরু করলো। কোথায় তোমরা? আসো আসো। এসে এই বাচ্চাটাকে নিয়ে যাও। আর তাকে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য শক্তি শালী করে দাও। এসো এসো। আমি আবার ও টের পেলাম চার পাশটা কেমন জানি কাঁপছে। আর আমি দেখলাম  ঝড়ের মতো কিছু সাদা আলো নীলাকে ঘেরাও করে ফেললো। আমি চোখে কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ দেখলাম ওই ঝড়ের মতো আলোটা মিশে গেলো। আর নীলার পেটের বাচ্চা টা উধাও। কারন পেটটা স্বভাবিক ছিলো। নমানি ওঝা বললো আর কোন চিন্তা নেই। ওরা আমাদের কথা শুনেছে। ওরা বাচ্চাটিকে নিয়ে গেছে। আর কোন সমস্যা নেই। 

আমি জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু ও ফিরে আসবে কখন। নমানি ওঝা বললো তোমাদের কোন বিপদ হলেই ও ফিরে আসবে আর তোমাদের রক্ষা করবে। একটু পর নীলার জ্ঞান ফিরে এলো। নীলার জ্ঞান ফিরতেই জিজ্ঞেস করলো তার পেট থেকে যে বাচ্চাটা হয়েছে সে কোথায়? সে তাকে দেখবে। আমি আর নমানি ওঝা নীলাকে বললাম তাকে শুভ শক্তির আত্মারা নিয়ে গেছে পূর্ণ শক্তিতে রুপান্তরিত করতে। নীলা কেঁদে কেঁদে  বললো না আমি ওকে একবার দেখতে চায়। ওঝা বললো নীলা তুমি শান্ত হও। ও আবার আসবে আর তোমাকে মা বলে ডাকবে। ওঝা আমাদের উদ্দেশ্য করে বললো এবার তোমরা  বাড়ি ফিরে যাও। আর সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করো। আমি নীলাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম। সব কিছুই স্বাভাবিক ছিলো। আজ ওঝার দেওয়া তিন দিন শেষ হবে। 

কিন্ত এখনো পর্যন্ত চন্দ্রার মেয়ে বা চন্দ্রা কেউ ই আমাদের কোন ক্ষতি করেনি। আজ রাত বারোটার কথা আমি আর নীলা রুমে শুয়ে ছিলাম।  আর তখন ই ড্রয়িং রুম থেকে বাবা আর মায়ের চিৎকার শুনতে পেলাম।  আমি আর নীলা দৌড়ে ওখানে এলাম। এসেই দেখি চন্দ্রার মেয়ে আমার বাবার গলায় ধরে শূন্যে তুলে বার বার জিজ্ঞেস করছে বল তোর ছেলে কোথায়?  কোথায় রুদ্রের বংশ ধর? আমি ওখানে গিয়েই চেঁচিয়ে বললাম এই যে আমি রুদ্রের বংশধর।  দেখো যা করার আমাকে করো আমার মা বাবা কে ছেড়ে দাও। পাশে দাঁড়িয়ে চন্দ্রা সব ই দেখছে। হয়তো ও ই আজ ওর মেয়েকে প্রতিশোধের জন্যে এখানে নিয়ে এসেছে। পরক্ষণেই চন্দ্রার মেয়ে ইরাবতী বাবার গলাটা ছেড়ে দিলো। বাবা ধপাস করে মেঝেতে পরে গেলো। এবার ইরাবতী আমার গলাটা ধরে আমাকে শুন্যে তুলে  ছুড়ে কাঁচের টেবিলের উপরে ফেললো। আমি কাঁচের টেবিলের উপরে পরে ক্ষত বিক্ষত হলাম। 

আমার সারা শরীর দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিলো। নীলা বার বার বলছে প্লিজ ওকে মেরো না। ওরতো কোন দোষ নেই। কিন্তু ইরাবতী শুনছিলো না। সে চিৎকার দিয়ে বললো আজ আমি এই রুদ্রের বংশধরদের হত্যা করে আমার আর আমার মায়ের প্রতিশোধ নেবো।  ঠিক তখনি সেখানে আরো একজন চলে এলো। আর সে হলো নীলার মেয়ে। সে সেখানে এসেই বলে উঠলো আমি থাকতে তুই এদের কিছুই করতে পারবি না।৷ পিছনে তাকিয়ে চন্দ্রা আর ইরাবতী খুবই অবাক হয়ে গেলো। কারন নীলার পেটে জন্ম নেওয়া মেয়েটি চন্দ্রার মেয়ে ইরাবতীর মতোই দেখতে ছিলো। চন্দ্রা এবার বিপদে পরে গেলো এটা ভেবে যে এই মেয়েটা কে? আর কেন ই বা সে দেখতে তার মেয়ে ইরাবতীর মতো? 

ঠিক তখনি নীলার মেয়ে আর চন্দ্রার মেয়ে ইরাবতীর মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলো। যুদ্ধে দুজনই খুবই আঘাত পাচ্ছিলো যা চন্দ্রার বুকে এসে লাগছিলো।  ঠিক সেই সময় সেখানে নমানি ওঝা চলে এলো। আর চন্দ্রাকে উদ্দেশ্য করে বললো কী চন্দ্রা খুব অবাক হচ্ছো? কী ভাবছো এই দুজনের চেহেরা প্রায় এক কেনো? কারন এই দুজই ই হলো তোমার মেয়ে। চন্দ্রা খুবই অবাক হলো আর নমানি ওঝার গলা চেপে ধরে বললো কী বসছিস এসব? নমানি ওঝা চন্দ্রাকে বললো তোমার মেয়ে ইরাবতী কে থামতে বলো নয়তো এই মেয়ের হাতে ওর মৃত্যু হবে।  কারন শুভ আর অশুভ শক্তির লড়াই এ জয় সব সময় শুভ শক্তির ই হয়। এবার চন্দ্রা ওর মেয়ে ইরাবতী কে থামতে বললো। তার পর নমানি ওঝা চন্দ্রাকে বললো তোমার চুল আর মমি থেকেই এই নীলার বাচ্চার জন্ম। তাইতো দুজন এক দেখতে। যার উদ্দেশ্য তোমাদের আটকানো। একে তোমার মেয়ে বললেও ভুল হবে না। 

এখন তুমি ঠিক করো তুমি কী নিজের দুই মেয়ের লড়াই করিয়ে তাদের মৃত্যু দেখতে চাও? এবার চন্দ্রা একদম চুপ হয়ে গেলো। এবার নমানি ওঝা নীলার মেয়েকে বললো এই চন্দ্রার চুল থেকে তোমাকে বানানো হয়েছে। নীলা যেমন তোমার মা এই চন্দ্রা ও তোমার মা। এবার নীলা মাথাটা একটু নিচু করে ফেললো। নীলার পেটে জন্ম নেওয়া মেয়েটি চন্দ্রার দিকে এগিয়ে গেলো আর তার হাতে ধরে বললো মা তুমি ইরাবতীকে দিয়ে যেটা করাচ্ছো এটা ঠিক না। সেই একশো বছর আগে রুদ্র তোমার সর্বনাশ করেছিলো বলে আজ তুমি এই নিরীহ মানুষের উপর এ ভাবে প্রতিশোধ নিতে পারো না। এবার চন্দ্রা তার মাথাটা নিচু করে ফেললো। আর চোখের পানি ফেলে কেঁদে কেঁদে বললো আমি আত্মা হত্যা করার সময় আমার পেটে যদি সন্তান না থাকতো  তাহলে হয়তো আজ আমার অতৃপ্ত আত্মা পৃথিবীতে থাকতো না। আমার সন্তান পৃথিবীতে আসতে পারেনি বলেই আমার আত্মা শান্তি পায়নি।

নমানি ওঝা বললো চন্দ্রা তোমার আত্মাকে মুক্তি দেওয়ার একটা রাস্তা আছে। তুমি তোমার এই দুই মেয়েকে নিয়ে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাও। আর তাদের দুজন কে পুনরায় নীলার গর্ভে সাধারণ  মানুষ হিসাবে পাঠাও। এতে তোমার আত্মাটাও শান্তি পাবে আর তোমার বাচ্চা  ও পৃথিবীর মুখ দেখতে পেলো। এই কথা শুনে চন্দ্রা খুবই খুশি হলো। আর এতে নীলা ও রাজি ছিলো। কথা গুলো শুনেই চন্দ্রার চোখ দিয়ে পানি পরছিলো। আর আমরা দেখতে পেলাম চন্দ্রার ছায়াটা ঘোলাটে হতে শুরু করলো আর তার দুই মেয়ের ও। নমানি ওঝা বললো চন্দ্রার আত্মা শান্তি পেয়েছে তাই তার অতৃপ্ত আত্মা মুক্তি পাচ্ছে। 

চন্দ্রা এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে নীলা আর জুনায়েত এর কাছে ক্ষমা চাইলো।  আর জুনায়েত এর বাবা মায়ের মাথা থেকে সব ভুলিয়ে দিলো যা তারা দেখেছিলো। একদম মিশে যাওয়ার আগে চন্দ্রা বললো আমার মেয়েদের দেখে রেখো। এই বলেই চন্দ্রা ও তার দুই মেয়ের আত্মা একদম হাওয়ায় মিশে গেলো। তারা চলে গেছে এই পৃথিবী ছেড়ে। এবার জুনায়েত খুরিয়ে খুরিয়ে নমানি ওঝার কাছে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে বললো ওঝা সাহেব আজ আপনি না থাকলে আমরা বাঁচতে পারতাম না। আপনি অনেক মহান একজন মানুষ। চন্দ্রা তার কথা রেখেছিলো। নীলার গর্ভে সে তার সন্তান দের পাঠিয়েছে কারন  বছর খানিক পর নীলা মা হয়। আর নীলার জমজ দুটো মেয়ে হয়। ঠিক মেয়ে দুটো চন্দ্রার সেই মেয়ে দুটোর মতই দেখতে হয়েছিলো। জুনায়েত একজন এর নাম রাখে ইরাবতী আর নীলা অন্যজন এর নাম রাখে রুহি। কারন তার রুহ্ থেকেই অন্যজন এর জন্ম হয়েছিলো।

                  ........  সমাপ্ত.................

গল্পটি লিখেছেনঃ জুনায়েত হাসান 
এরকম আরও গল্প পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।

রেসিপি দেখুন
No comments :

No comments :

Post a Comment