লোম হর্ষক ভূতের গল্প চন্দ্রা পর্ব ৩
চন্দ্রা আসছে। যদি বাঁচতে চাও তাহলে তারা তারি এখান থেকে পালাও। এই বলেই নমানি ওঝা ওখান থেকে দৌড়ে পালাতে থাকলো। আমি কী করবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তার পর আর কিছু না ভেবেই আমি ও নমানি ওঝার পিছন পিছন দৌড়াতে লাগলাম। কিছুক্ষণ দৌড়ানোর পর নমানি ওঝা বড় রাস্তার ধারে এসে একটু থামলো। আমি তার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলাম কী হলো ওঝা সাহেব আপনি এই ভাবে দৌড়িয়ে ওখান থেকে পালিয়ে এলেন কেনো? ওঝা সাহেব তার চোখ গুলো বড় বড় করে বললো ওখানে থাকলে এতক্ষণে আমাদের মরতে হতো।
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম মরতে হতো মানে? ওঝা বললো ওখানে চন্দ্রা চলে এসেছে। আমি এবার রেগে জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু এই চন্দ্রা টা কে? কী ওর পরিচয়? আর আমার নীলার সাথে এই চন্দ্রার সম্পর্ক ই বা কী? নমানি ওঝা বললো এই প্রশ্নের উওর আছে আমার কাছে। তুমি আমার সাথে আমার আস্তানায় চলো। এই সব কিছুর ব্যাখা আমি তোমাকে দেবো। আমি নমানি ওঝার সাথে তার আস্তানায় চলে গেলাম। ওখানে যেতেই নমানি ওঝা আমাকে একটা পাটিতে বসতে দিলো। আর বললো তুমি একটু বসো আমি ভিতর থেকে আসতেছি। ওঝা সাহেব ভিতরে গেলো আর আসার সময় হাতে করে একটা পুরনো বই নিয়ে এলো। বইটা পুরনো হলেও তার উপরের কভার পেইজটা একদম চক চক করছে। ওঝা সাহেব বইটা আমার সামনে রাখলো আর তিনি ও পাটিতে বসে পরলো।
আমি বেশ করে খেয়াল করলাম বইটার উপরে রক্ত দিয়ে ইয়া মোটা অক্ষরে লিখা চন্দ্রা। এই দৃশ্য দেখে আমার গা শিউরে উঠলো। এবার নামানি ওঝা কী যেন মন্ত্র পাঠ করতে শুরু করলো। তার পর আস্তে করে বইটা খুললো। আর আমাকে বললো মন দিয়ে শুনো তাহলে চন্দ্রা কে? কী তার পরিচয়? প্রায় একশত বছর আগের কথা ছোট্ট একটি রাজ্যে বাস করতো চন্দ্রা নামের একটি মেয়ে। তার সৎ মা জোর করে চন্দ্রার বিয়ে দেন একজন মাতালের সাথে। চন্দ্রার স্বামী মাতাল হয়ে চন্দ্রার উপর অনেক অত্যাচার করতো। তাই বাধ্য হয়ে চন্দ্রা তার স্বামীর বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। কিন্তু নিজ বাড়িতে জায়গা হয়নি চন্দ্রার। সৎ মা তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। তাই চন্দ্রা বাধ্য হয়ে গ্রামের একদম শেষের দিকে ছোট একটা কুটিরে বাস করা শুরু করলো । চন্দ্রা বুঝতে পারলো সে মা হতে চলেছে। চন্দ্রা ভেবেছিলো এই সন্তান জন্ম নেবার পর তাকে নিয়েই বাকি জীবন টুকু কাটিয়ে দেবে চন্দ্রা। আর তখন সেই রাজ্যের রাজা ছিলো রুদ্র নামের একজন লোক। সেই রুদ্র ছিলো একজন নির্যাতিত রাজা। যে প্রজাদের উপর অনেক অত্যাতার করতো। আর রাজ্যের সুন্দরী নারীদের তার রাজবাড়ীতে তুলে নিয়ে তাদের তার ভোগের বস্তু বানাতো। এক সময় রুদ্রের নজর পরলো সেই চন্দ্রার উপর। আর লোক পাঠিয়ে চন্দ্রাকে রুদ্র তার রাজপ্রাসাদে তুলে নিয়ে গেলো। চন্দ্রা রুদ্রের হাতে পায়ে ধরে বলেছিলো আমার এতো বড় সর্বনাশ করবেন না প্রভু। আমার পেট এ একটা বাচ্চা আছে।
কিন্তু সেই পাষাণ রাজার হৃদয় বিন্দু মাত্র গলাতে পারে নি চন্দ্রা। হিংস্র পশুর মতো ঝাপিয়ে পরে চন্দ্রার উপর। কেড়ে নেয় চন্দ্রার সতিত্ব। দুঃখে কষ্টে ও নিজের প্রতি তিব্র ঘৃনায় চন্দ্রা আত্মাহত্যার পথ বেছে নেয়। গ্রামের জঙ্গলের সেই বড় গাছটাতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মাহত্যা করে চন্দ্রা। চন্দ্রার সাথে সাথে চন্দ্রার পেটে থাকা বাচ্চা টাও মারা যায় সে দিন। সেদিন এর পর থেকে চন্দ্রার অতৃপ্ত আত্যা সেই রাজ্যে ঘুরা ঘুরি শুরু করে। প্রথমে তার স্বামী আর পরে তার সৎ মাকে মেরে ফেলে চন্দ্রা। চন্দ্রা রুদ্র কে মারা চেষ্টা কয়েক বার চালিয়ে ছিলো। কিন্তু রুদ্র বেঁচে যায়। আর বুঝে যায় চন্দ্রা আত্মা হয়ে তাকে মেরে ফেলতে চাইছে। তাইতো রুদ্র বড় তান্ত্রিক এর সাহায্যে বিশেষ কৌশলে চন্দ্রাকে বন্দি করে ফেলে। আর জঙ্গলের সেই পুরনো গুহায় চন্দ্রাকে বন্দি করে ঘুম পারিয়ে রাখা হয়। আর এই সমস্ত ঘটনা বই এ লিপিবদ্ধ করে সেই তান্ত্রিক যে চন্দ্রাকে বন্দি করে ছিলো। তিনি বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় লিখে গেছেন চন্দ্রা একদিন ফিরবেই। কেউ একজন তো তার ঘুম ভাঙ্গাবেই। আর সেদিন চন্দ্রা কাউকে বাঁচতে দেবে না। সবাই কে মেরে সে তার প্রতিশোধ নেবে। ঘটনাটা শুনে আমার শরীরে কাটা দিয়ে উঠছে। যেমন ভয় করছে ঠিক তেমন ই চন্দ্রা মেয়েটির জন্য অনেক খারাপ ও লাগছে।
আমি নমানি ওঝাকে জিজ্ঞেস করলাম যদি এই নীলা চন্দ্রা হয় তাহলে আমার আসল স্ত্রী নীলা কোথায়? নমানি ওঝা বললো নিশ্চয়ই ওর সেই গুহার আস্তানায় তাকে আটকে রেখেছে। তিনি আমাকে আশ্বাস দিয়ে বললো তুমি কোন চিন্তা করো না কাল পূর্ন সূর্য গ্রহন। কাল সারা দিন সমস্ত আত্বরা তাদের শক্তি হারাবে এক দিনের জন্য। এই সুযোগ টা কাজে লাগিয়ে আমরা তোমার স্ত্রী নীলাকে ওখান থেকে উদ্ধার করবো। এখন তুমি বাড়ি যাও। আমি নমানি ওঝার কথা মতো বাড়ি চলে গেলাম। বাড়ি গিয়ে দেখি সবাই আমার অপেক্ষায় বাইরে বসে আছে। আমাকে দেখেই মা জিজ্ঞেস করলো কোথায় ছিলি সারা দিন তুই? বউমা বাড়ি ফিরেছে। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম নীলা? মা বললো হ্যা নীলা বাড়ি ফিরেছে। সে নাকি ডাক্তার এর কাছে গিয়েছিলো কাউকে কিছু না বলে। যা তুই তোর রুমে যা। আমি রুমে এসে দেখি নীলা মানে চন্দ্রা ঘুমিয়ে পরেছে। আমি খেয়াল করলাম নীলা মানে চন্দ্রার পেট আগের থেকে আরো বেশি ফুলে গেছে দেখে মনে হচ্ছে এখনি না জানি পেটটা ফেটে যায়। আমার মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে আজ আবার পেট এতো বড় হলো কেনো? কাকে হত্যা করলে নতুন করে? যাক পরের দিন সকাল বেলা ঠিক একি ঘটনা ঘটলো। আমি ঘুম থেকে উঠেই দেখি নীলা রুমে নেই। আমি বুঝতে পারলাম সে নীলা মানে চন্দ্রা আজকেও বাড়ি থেকে বেরিয়েছে। আমি ঘুম থেকে উঠেই সরাসরি নমামি ওঝার কাছে এসে পরলাম। আর আসতেই তিনি আমাকে বললো কবিরাজ আর বেঁচে নেই যে তোমাকে আমার কাছে এনেছিলো। চন্দ্রা ওকে মেরে ফেলেছে। আমার আর বুঝার বাকি রইলো না রাতে তার পেটটা এতো ফুলে ছিলো কেনো। নমানি ওঝা বললো তারা তারি চলো তোমার স্ত্রী কে উদ্ধার করতে হবে।
আমরা দুজন জঙ্গলের সেই গুহার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরলাম। ঘন্টা দুই এক পর সেখানে পৌছে গেলাম। কী ভয়নক গুহার মুখ টা। পুরো মাকড়সার জাল দিয়ে ঘেড়া ছিলো। আমরা ভিতরে ঢুকলাম। গুহার বাইরের অংশ টা আলোকিত থাকলেও ভিতরটা একটু অন্ধকার ছিলো। আমি মোবাইল এর চর্ট জ্বালিয়ে নিলাম। আমরা একটু ভিতরে যেতেই দেখতে পেলাম একজন মেয়েকে পাথরের উপর শুয়িয়ে রাখা হয়েছে। আমি দৌড়ে কাছে গিয়ে দেখলাম এটা আসল নীলা। আমি ওঝাকে বললাম এই দেখুন এটাই হলো আমার আসল নীলা। ওঝা বললো ওকে নিয়ে তারা তারি এখান থেকে পালাতে হবে চলো। ঠিক তখনি আমরা গুহায় অন্য কারো উপস্থিতি টের পেলাম। ওঝা বললো ভয় পেও না আমাদের পেছনে কেউ একজন আছে। আমরা পিছনে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কে ওখানে? ঠিক তখনি একটা অট্টহাসি দিয়ে কেউ বললো জানিস না কে আমি? দেখবি আমি কে? হুট করে আত্মাটা আমাদের সামনে এসে পরলো আর চিচিয়ে বললো আমি চন্দ্রা আআআআ।
লোম হর্ষক ভূতের গল্প চন্দ্রা পর্ব ৪
No comments :
Post a Comment