লোম হর্ষক ভূতের গল্প চন্দ্রা পর্ব ২
নীলার পেটের সেই লোমে আবৃত বাচ্চা টাকে দেখে আমার গলা শুকিয়ে একদম কাঠ হয়ে গেছে। আমি নড়াচড়া করতে পারছিলাম না। আমি খেয়াল করলাম আমার মাথাটা ঘুরছে। আর মাথা থেকে ঘাম বিছানায় টপ টপ করে পরছে। তারপর আমি আর কিছু বলতে পারবো না। সকালে যখন চোখ খুললাম তখন আমি দেখতে পেলাম আমার চারপাশে সবাই ঘেরাও করে দাড়িয়ে আছে। মা আমাকে জিজ্ঞেস করলো কীরে তুই বিছানায় অজ্ঞান হয়ে পরে আছিস। বউ মা কোথায়? আমি ঘরের চারদিক টা একটু ভালো করে দেখলাম। আর বললাম নীলা তো আমার সাথে রুমেই ছিলো। কিন্তু এখন কোথায় গেলো?
আমি মাকে বললাম মা তোমরা সবাই বাড়িতে ভালো করে খুজে দেখো নীলা কোথায় গেলো? আমি একটু বাইরে থেকে আসছি। মা আমাকে বললো এই অসুস্থ শরীরে তুই আবার কোথায় যাবি? উত্তরে মাকে বললাম খুব দরকারী একটা কাজ আছে মা। এখনি আমাকে যেতে হবে। আমি তারা হুরো করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরলাম। আর বেরিয়েই ওই কবিরাজ এর বাড়ির দিকে যেতে লাগলাম। যে আমাকে বলেছিলো আমার স্ত্রী কোন সাধারণ মানুষ নয় সে হলো একটা ভয়ানক আত্মা। আমি কবিরাজ এর বাড়ি পৌঁছে গেলাম। আমাকে দেখেই কবিরাজ বললো এতো সকাল বেলা তুমি? কোন বিপদ হলো নাতো?
আমি বললাম কবিরাজ সাহেব খুব বড় বিপদ। আপনি যেমনটা বলেছেন ঠিক তেমন টাই হয়েছে। সত্যি আমার স্ত্রী মানুষ নয় সে হলো একটা আত্মা। তার একটা পা উল্টো ছিলো। কিন্তু কবিরাজ সাহেব আরো একটা ভয়ের কথা আপনাকে বলা হয়নি। কবিরাজ বললো কী কথা বলো?
আমি বললাম আমি কাল রাতে নীলার পেটে একটা বাচ্চা কে দেখেছি যার পুরো শরীর লোমে আবৃত। অনেক টা শিম্পাঞ্জির মতো দেখতে। আমার এ কথা শুনে কবিরাজ মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলো আর বললো এ কী ঘোর বিপদ আসতে চলেছে এই পৃথিবীতে। কবিরাজ এর কথা শুনে আমি খুব ঘাবড়ে গেলাম। আর বললাম এখন আমি কী করবো আপনি বলে দিন। কবিরাজ বললো আমি কিছু করতে বা বলতে পারবো না। কিছু করতে পারলে একমাত্র আমার গুরু নমানি ওঝাই করতে পারবে। আমি বললাম তাহলে আর দেরি কেনো এখনি তার কাছে আমাকে নিয়ে চলুন। কবিরাজ আমাকে তার কাছে নিয়ে গেলো। আমাকে দেখেই তিনি জিজ্ঞেস করলো কী সমস্যা তোমার বৎস। আমি এবং কবিরাজ সাহেব নমানি ওঝাকে সব খুলে বললাম। আমাদের কথা শুনে তিনি খুব অবাক হলো। ওঝাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম আমি একজন সাধারণ মানুষ হয়ে নীলার পেটের ওই ভয়নক বাচ্চাকে কী ভাবে দেখলাম?
ওঝা বললো তুমি নিশ্চয়ই চাঁদের আলোতে দেখেছো? আমি অবাক হয়ে বললাম আপনি কী করে জানলেন? ওঝা বললো চাঁদের আলো এই আত্মা রা তাদের শরীরে প্রবেশ করায় আর এই চাঁদের আলোয় তাদের মানুষ রূপে থাকতে সাহায্য করে। আলো গ্রহনের সময় এদের স্পষ্ট ভাবে দেখা যায়। তাই তুমি বাচ্চা টাকে দেখতে পেয়েছো। আমি বললাম সবই ঠিক আছে কিন্তু একদিনের মধ্যে একটা বাচ্চা এতো বড় হয় কী ভাবে? নমানি ওঝা বললো আমি এই সম্পর্কে বইয়ে পড়েছি। এই ধরনের আত্মারা সন্তান জন্ম দেয়ার জন্য মানুষ এর সাহায্য নেয়। এ ক্ষেত্রে সে তোমাকে পুরুষ হিসাবে ব্যাবহার করেছে। আর শারীরিক সম্পর্কের কিছু সময়ের পরেই এরা মা হওয়ার ক্ষমতা লাভ করে। কিন্তু তাদের গর্ভের সেই সন্তান বড় করার জন্য তাদের চাই রক্ত। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম রক্ত মানে? নমানি ওঝা বললো সে যত বেশি মানুষ হত্যা করে তাদের রক্ত গ্রহন করবে ঠিক তত তারা তারি তার গর্ভের সন্তান বড় হবে এবং পৃথিবীতে ভূমিষ্ট হবে।
আমি বললাম কিন্তু এখনো পর্যন্ত কেউ তো মারা যায়নি আমার পরিবারে। তাহলে তার পেটের সন্তান এতো বড় হলো কী করে। ওঝা বললো হয়তো তোমাদের আড়ালে কিছু একটা হয়েছে যা তোমরা জানো না। আমি বললাম ওঝা সাহেব আমি এখন কী করবো? দয়া করে আপনি আমাকে সাহায্য করুন। ওঝা বললো আগে এই আত্মার আস্তানা অর্থাৎ ও কোথায় থাকে সেই জায়গা খুঁজে বের করতে হবে। চলো প্রথমে তোমার সাথে তোমার বাড়ি যাবো তার পর জঙ্গলের সেই বড় গাছটার নিচে যাবো যেখানে তোমাদের বিয়ের গাড়িটা নষ্ট হয়েছিলো। ওঝা সাহেব কে নিয়ে আমি বাড়ির দিকে রওনা দিলাম৷ আসার আগে ওঝা সাহেব ছোট একটা বই সাথে করে নিয়ে এলো। বাড়িতে আসতেই সবার চিৎকার
চেঁচামেচি শুনতে পেলাম। আমি আর ওঝা সাহেব উঠনের মাঝখান বরাবর যেতে দেখতে পেলাম উঠনে আমাদের বাড়ির কাজের ছেলেটাকে শুয়িয়ে রাখা হয়েছে। মা বললো ও নাকি মারা গেছে। আমি খেয়াল করলাম কাজের ছেলেটার সম্পুর্ন শরীর সাদা হয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে কেউ ওর শরীর থেকে পুরো রক্ত শুষে নিয়েছে। এবার নমানি ওঝা আমার দিকে তাকিয়ে একটু হেসেঁ বললো বলেছিলাম না তোমাকে? ওঝা সাহেব আমাকে ডেকে বললো আর দেরি করা ঠিক হবে না। তারা তারি ওই জঙ্গলের বড় গাছটার কাছে আমাকে নিয়ে চলো। আমি বললাম ঠিক আছে চলুন আমার সাথে। নমানি ওঝাকে সাথে নিয়ে সেই জঙ্গলের ভিতরের গাছটার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরলাম। আমরা ঘন্টাখানিক পর সেখানে পৌঁছে গেলাম। গাছটার কাছে পৌঁছাতেই নমানি ওঝা সরাসরি গাছের কাছে চলে গেলো। আর গাছের গায়ে কী যেন লেখা ছিলো সে গুলো পড়তে শুরু করলো? আর তার পর তার হাতে থাকা বই এর সাথে সে গুলো মেলাতে শুরু করলো। আর একটু পর সে হা করে বললো চন্দ্রা আআআআ।
আমি জিজ্ঞেস করলাম চন্দ্রা মানে? সে চোখ বড় বড় করে বললো তুমি যে নীলার কথা বলছো সে নীলা নয় সে হলো চন্দ্রা। যার কথা একশো বছর আগে এই বইয়ে উল্লেখ আছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম কে এই চন্দ্রা? চন্দ্রা হলো.. যেই এই কথা নমানি ওঝা বলতে যাবে ঠিক তখনি চার পাশটা অন্ধকার হয়ে এলো আর জুড়ে বাতাস শুরু হলো। আর তখনি ওঝা চিৎকার দিয়ে বলতে থাকলো চন্দ্রা আসছে। যদি বাঁচতে চাও দৌড়ে পালাও এখান থেকে।
লোম হর্ষক ভূতের গল্প চন্দ্রা পর্ব ৩
No comments :
Post a Comment