ভুতের গল্প ৩৩ ভয়ংকর এক রাত্রি

গাড়ি থেকে যখন এই স্টেশনে নামি রাত তখন ঠিক একটা।যাত্রিদের স্টেশনে নামিয়ে দিয়ে রেল গাড়িটি আবার চলতে লাগলো। সঙ্গে থাকা ব্যাগটা কাঁদে ঝুলিয়ে স্টেশন মাস্টারের রুমের দিকে গেলাম। ভিতরে ঢুকতে দেখি সেখানে একজন লোক বসে আছে।উনি হয়তো স্টেশন মাস্টার। তাকে গিয়ে জিগাস করলাম এখান থেকে রসুলপুর কত দূর? তিনি উত্তর দিলেন এখান থেকে রসুলপুর ৬ কি:মি রাস্তা।কিন্তু এত রাতে এখান থেকে রসুলপুর যাওয়ার কোন ভ্যান পাওয়া যাবেনা। তাই রাতটা কষ্ট করে এখানে কাটাতে। তার সাথে কথা শেষ করে ঐ রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। বাহিরে এসে দেখি চারপাশটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা কোন মানুষ-জন নেই। পাশে যাত্রিদের ওয়েটিং রুম । সেখানে গিয়ে একটি চেয়ারে বসলাম। তারপরে চিন্তা করলাম কোন মতে আজ রাতটা এখানে কাটিয়ে কাল সকালের দিকে রসুলপুরের উদেশ্যে রওনা হব। দেয়ালে ঝুলে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত দেড়টা বেজে গেছে।চোখে একটু একটু ঘুম ঘুম ভাব।তাই চোখ বন্ধ করে বসে রইলাম। হঠাত্ এমন সময় একজন লোক এসে উপস্থিত। এসে বলে স্যার কৈই যাইবেন? -রসুলপুর যাব।কিন্তু তুমি কে? -আমার নাম মতি এই এলাকায় ভ্যান গাড়ি চালাই। -ও তাই নাকি।আচ্ছা তুমি কি রসুলপুর যাবে? -হ যামু স্যার চলেন। মনে মনে চিন্তা করলাম কষ্ট করে স্টেশনে রাত কাটার চেয়ে গন্তব্যে চলে যাওয়া ভালো। তাই ব্যাগটা হাতে নিয়ে বলি চল মতি। হাটতে হাটতে মতির ভ্যান গাড়ির সামনে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখি একজন লোক আগে থেকে ভ্যানের উপর বসে আছে। লোকটি সমস্ত শরীর চাদর দিয়ে ঢেকে রেখেছে।চেহারাটা পর্যন্ত ভাল করে দেখা যাচ্ছে না।আমি কোন কথা না বলে লোকটার পাশে গিয়ে বসলাম।তার পরে মতি ভ্যান গাড়ি চালাতে শুরু করে।কিছু দূর আসার পরে আমরা একটি মাটির রাস্তায় উঠলাম।সেই রাস্তার দুই পাশে ছিল বিস্তৃত ধান ক্ষেত।যত দূরে চোখ যায় শুধ হলুদ পাকা ধানের হাসি। মাঝে মাঝে রাস্তার দুই পাশে হালকা কিছু গাছ দেখা যাচ্ছে। আর খরা মৌসুমে চাষাবাদের জন্য এক পাশে একটি খাল খনন করা আছে। আকাশে হালল্কা চাদের আলো তার পরে ও চারপাশটা বেশ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।আশেপাশে কোন জনবসতি নেই তাই চারদিকে শুধু ঝিঁ ঝিঁ পোকার শব্দ ছাড়া কিছুই শোনা যাচ্ছেনা।মাঝে মাঝে দূর থেকে একটি খেঁক শেয়ালের ডাক কানে ভেসে আসছে।কার্তিক মাসের শেষের দিকে তাই হালকা একটু শীত পড়ছে। মাঝে মাঝে হিমেল হাওয়া শরীলে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে।তাই ব্যাগ থেকে জ্যাকেট নিয়ে গায়ে জড়িয়ে নিলাম। একটু পরে মতি জিগাস করে "স্যার রসুলপুর আপনার কে থাকে? -রসুলপুর আমার এক বন্ধুর বাড়ি।কিছুদিন পরে তার বড় ভাইয়ের বিয়ে তাই যাচ্ছি। -ও আচ্ছ মাঝ পথে আসার পরে মতি বলে স্যার আপনারা বসেন আমি একটু আসি। বুঝতে পারলাম সে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যাচ্ছে। মতি পিঁছনের দিকে একটু দূরে গিয়ে রাস্তার থেকে নিচে নেমে গেল। তাকে আর দেখা যাচ্ছেনা।অনেকক্ষন বসে থেকে আমার কোমরে ব্যথা হয়ে গেছে।তাই ভ্যান গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার মধ্যে হাটাচলা করতে লাগলাম। অনেক সময় হয়ে গেছে কিন্তু মতি এখনো ফিরে আসছে না। আমি তখন তার নাম ধরে ডাকতে দিলাম কিন্তু উত্তর পেলাম না।আমার মাঝে কেমন একটা টেনশন কাজ করছে। কিন্তু আমার পাশে বসা লোকটি কোন সাড়া-শব্দ নেই, চুপচাপ বসে আছে।ব্যাগ থেকে তখন টর্চলাইটটা নিয়ে আস্তে আস্তে ঐ দিকে গেলাম, কিন্তু সেখানে গিয়ে কিছুই দেখতে পেলাম না। আস্তে আস্তে আরো একটু সামনে গেলাম।হঠাত্ লক্ষ্য করলাম খালের পাশে কার যেন লাশ পড়ে আছে। কাছে গিয়ে দেখি এটি মতির লাশ। কে যেন তাকে গলা কেটে হত্যা করেছে।আর তার রক্ত গড়িয়ে খালের জলে মিশে সেটি ও লাল হয়ে গেছে। এমন সময় লক্ষ্য করলাম ধান ক্ষেতের মাঝখান থেকে কিছু একটার শব্দ হচ্ছে।একসময় শব্দের তীব্রতা বাড়তে থাকে। বুঝতে পারলাম ধান ক্ষেতের ভেতর দিয়ে কিছু একটা এদিকে আসছে। ভয়ে তখন দৌড় দিয়ে ভ্যান গাড়ির সামনে চলে আসি।কিন্তু এখানে এসে দেখি চাদর গায়ে দেয়া সে লোকট নেই। আমি চারপাশ ভাল করে দেখলাম কিন্তু কোথাও লোকটিকে দেখা পেলাম না।হঠাত্ লক্ষ্য করলাম দূর থেকে কতগুলো কুকুর শব্দ করতে করতে এদিকে ছুটে আসছে।কুকুর গুলোকে দেখে আমি দূত ভ্যানের উপর উঠে গেলাম।কুকুর গুলো ভ্যান গাড়ির সামনে এসে কান্নার সুরে ডাকেতে শুরু করে। মনে হচ্ছে কুকুর গুলো কিছু একটা দেখে ভয় পেয়েছে।তাই ঐ দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।এমন সময় খেয়াল করলাম ঐ দিকে নিচ থেকে কেউ একজন রাস্তার উপরে উঠেছে। হাতে থাকা টর্চলাইটটি সে দিকে ধরলাম।দেখি রাস্তার উপর এক মধ্যে বয়সী মানুষ দাড়িয়ে আছে।মুখে আর পোষাকে রক্ত মাখা দাগ।চোখ যেন জ্বল জ্বল করছে আর এক দৃষ্টিতে এদিকে তাকিয়ে আছে। লোকটিকে দেখে কুকুর গুলো ভয়ে সামনের দিকে দৌড় দিল।আমি তখন কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। চিন্তা করলাম ভাগ্যে যা থাকে থাকুক ব্যগটা নিয়ে সামনের দিকে দৌড় দেব।তাই ব্যগটি হাতে নিয়ে দিলাম একটা দৌড়।কিছু দূর আসার পরে খেয়াল করলাম সামনে দিয়ে একজন লোক হেটে যাচ্ছে।দূত তার কাছে গেলাম। কাছে গিয়ে দেখি এটি ভ্যানের সেই চাদর গায়ে দেয়া লোকটি। তাকে দেখে মনে কিছুটা সাহস পেলাম। লোকটিকে বললাম"ভাই আপনি হেটে চলে আসলেন ঐ দিকে কে যেন মতি ড্রাইভার কে খুন করেছে। লোকটি গম্বীর গলায় উত্তর দিল-তাই নাকি? এই প্রথম আমি লোকটির গলার আওয়াজ শুনতে পেলাম।কিন্তু আওয়াজটি আমার কাছে অতি পরিচিত মনে হচ্ছে।মনের মাঝে কেমন একটা খটকা লাগে। তাই লোকটিকে বলি "ভাই আপনি চাদর দিয়ে এভাবে মুখ ঢেকে রেখেছেন কেন? আপনে কি আপনার চেহারাটা দেখাবেন। আমার কথা শেষ হওয়ার পরে লোকটি তার মুখ থেকে চাদর সরালেন। চেহারাটা দেখে আমি হতভাগ হয়ে গেলাম। এটা কিভাবে সম্ভব! একটু আগে মারা যাওয়া মানুষটি জিন্দা হলো কিভাবে।আমার মুখ থেকে তখন আর কোন কথা বের হচ্ছিলো না।একসময় মনে হচ্ছে শরীল দূর্বল হয়ে আসছে আর আমি জ্ঞান হারাতে যাচ্ছি।তার পরে আর কিছু মনে নেই। হুশ আসার পরে দেখি আমার বন্ধু সহ তার পরিবারের লোকজন আমার চারপাশে বসে আছে। আর কে যেন আমার মাথায় পানি ঢালছে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
sr7themes.eu.org