ভূতের গল্প ৮
ঘটনাটা আমার এক ক্লোজ বন্ধুর
কাছ থেকে শোনা ।তার ভাইয়ার
সাথে সম্প্রতি এই ঘটনা ঘটেছে ।ঘটনাটি এই
গত ২০১২ সালের অক্টোবর এর শেষ
দিকের। রংপুর থেকে তাদের বাড়ি যেতে বাস এ
প্রায় ৮ ঘণ্টা সময় লাগে। কারন অনেক
রাস্তা এমনকি যমুনা সেতু পার হয়ে যেতে হয়।
তাই তিনি সাধারনত গাইবান্ধা জেলার
বালাসি ঘাট থেকে জামালপুর এর
দেওয়ানগঞ্জ থানার বাহাদুরাবাদ ঘাট
হয়ে চলাচল করেন। এটি হচ্ছে নৌ রুট।
এই রাস্তায় অনেক আগে লঞ্চ এবং ষ্টীমার
চলাচল করত। কিন্তু এখন আর কোন কিছুই
চলেনা। কারণ একদিকে যমুনা সেতু চালু
হয়ে গেছে এবং নদীটার গভীরতা একদম
কমে গেছে আর কিছু দূর পর পর ডুবো চর
তো আছেই। তাই বড় ইঞ্জিন চালিত ট্রলার
বা নৌকায় এ নদী পার হতে হয় এবং প্রায় ২
ঘণ্টার মত নৌকায় থাকতে হয়। আর ভাইয়ার
এই নদী ভ্রমন টা বেশ ভালই লাগে বিধায়
তিনি প্রায়ই এই রুট এ চলাচল করেন, যদিও
তিনি সাঁতার খুব একটা ভাল জানেন না ।
সেদিন তিনি বাড়ীতে যাওয়ার জন্য রংপুর
থেকে রওয়ানা দিয়ে, যথারীতি বালাসি ঘাট এ
গিয়ে বিকেল ৫.৩০ টার নৌকার টিকিট
কেটেছেন। শীতের দিন হওয়ায়
বেশি যাত্রী হচ্ছিল না। তাই
নৌকা ছাড়তে বেশ দেরী হচ্ছিল। তো ৬.১০
এর দিক এ মাত্র ১১ জন যাত্রী নিয়ে তাদের
নৌকা ছেড়ে দিল। কিছু দূর যাওয়ার পর
নৌকা উত্তর থেকে দক্ষিন দিক এ মাঝ
নদী দিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় সাধারনত
নদী একদম শান্তই থাকে। প্রায় এক ঘণ্টার
মত কেটে গেছে ভাইয়া মোবাইল এ হেড ফোন
লাগিয়ে গান শুনতে ছিলেন।
সেদিন কেন যেন নদী টা খরস্রোতা নদীর
মতো অশান্ত হয়ে উঠেছিল, বড় বড় ঢেউ এর
তালে ট্রলার টা বেশ দোল খাচ্ছিলো। অথচ
কোন প্রকার ঝড় এর লক্ষণ তো ছিলনা,
কারণ তখন নদীতে পানি কম ছিল আর
শীতকাল চলতে ছিল। এই প্রবল স্রোত এর
মাঝে নৌকা শুধু উপরের দিকে উঠছিল আর
নামছিল। যদিও ডুবে যাওয়ার ভয় ছিল তবুও
ভাইয়ার কাছে ভালই লাগছিলো। হঠাৎ
চারদিক ঘন কুয়াশায় অন্ধকার হয়ে গেল।
অন্ধকার এর মাঝে নৌকার সারেং প্রায়
আন্দাজে নৌকা চালাচ্ছিল। এভাবে ২/৩
মিনিট যাওয়ার পর নৌকার ইঞ্জিন
টা কয়েকবার অদ্ভুত সাউন্ড
করে থেমে গেল। সাউন্ড টা এমন ছিল যে,
গাড়ীর যদি তেল শেষ হয়ে যায়,
তাহলে গাড়ী যেমন শব্দ করে ঠিক তেমনই।
তো তারা সবাই নৌকার সারেং এবং মাঝিদের
কে জিজ্ঞাসা করলো কি হয়েছে? তখন
মাঝি বলল, একটু অপেক্ষা করুন
দেখছি আমরা কি হল। এই বলে তারা ইঞ্জিন
স্টার্ট দেওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু ৩/৪ বার
চেষ্টা করার পর ও ইঞ্জিন স্টার্ট হলনা।
ভাইয়া ও অন্যান্য যাত্রীরা কেমন যেন ভয়
পেলেন, এক তো শীত এর রাত তার
মধ্যে কুয়াশা।
মাঝি ও সারেং রা বলল আপনারা ধৈর্য
ধরে বসুন, আমরা দেখছি কি করা যায়, এই
বলে তারা ইঞ্জিন এর কিছু অংশ
খুলতে লাগলো। তো এভাবে প্রায় ১০ মিনিট
চলে গেল। হঠাৎ ভাইয়া দেখেন যে পশ্চিম দিক
এ কি যেন দেখা যাচ্ছে।
ভাইয়া ভাবলো হয়তো বা কোন মাছ ধরার
নৌকা মনে হয়।
তারা সেদিকে চাইলো দেখা যাক কোন
সাহায্য পাওয়া যায় কিনা। আস্তে আস্তে সেই
জিনিসটা কাছে এলো, আর নৌকার
যাত্রীরা বুঝতে পারলো যে না, এটি কোন মাছ
ধরার নৌকা না। এটি একটি মাঝারি সাইজ এর
লঞ্চ এর মতো দেখা যাচ্ছে। এটি নদীর
পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিক এ যাচ্ছিল।
এটি তাদের নৌকার একদম কাছে আসছিল,
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, তারা কোন
ইঞ্জিন এর সাউন্ড শুনতে পাচ্ছিলো না।
আর তাদের নৌকার যাত্রীরা কেউ এ ধরনের
লঞ্চ কখনো দেখেনি,
ভাইয়া তো আরো দেখেনি। এটার
আকৃতি টা কেমন যেন অদ্ভুত লাগছিলো।
যাত্রীরা সবাই সেদিক এ চেয়ে থাকলো, আর
তাদের নৌকার মাঝিরা বলল, অমন ধরনের
লঞ্চ বা নৌকা তারা এই
রুটে কখনো দেখেনি। লঞ্চ টা প্রায় ভাল
গতিতেই যাচ্ছিল।
লঞ্চ এর ঢেউ তাদের নৌকা তে এসে আঘাত
করতে লাগলো, আর তাদের নৌকা টা প্রায়
দুলে উঠলো। তখন লঞ্চ টা তাদের
নৌকা থেকে মাত্র ১০ হাত
সামনে দিয়ে চলে গেল, তারা ভাল করে খেয়াল
করলো যে লঞ্চ এ কোন মানুষ,
যাত্রী বা মাঝি মাল্লা অথবা কোন
সারেং ছিলনা এবং লঞ্চটার কোন ইঞ্জিন
এর সাউন্ড তারা কেউ ই
শুনতে পাচ্ছিলো না। লঞ্চটা খুব সুন্দর
করে কাপড় এবং লাল, নীল রঙ্গিন ফিতা,
কাগজের ফুল, জরি দিয়ে সাজানো ছিল,
অনেকটা বিয়ের গাড়ী যেভাবে সাজানো থাকে।
সেই সাজানো টাউ কেমন যেন অন্য রকম
বা অপরিচিত লাগছিলো।
তারা এটা দেখে মোটামুটি ভয় পেলো। আর
দুয়া দরুদ পড়তে লাগলো। এরপর
আস্তে আস্তে লঞ্চটা দূর কুয়াশায়
মিলে গেল। যাই হোক যাত্রীরা এসব নিয়া আর
কেউ কোন কথা বললো না। আর যেই
না লঞ্চ টা হারিয়ে গেল তার ১ মিনিট এর
মধ্যেই তাদের নৌকাটার ইঞ্জিন স্টার্ট
নিল। আর সারেং নৌকা ছেড়ে দিল। তাদের
নৌকার সারেং তাদের এই কয়েক মিনিট
যা যা হয়েছে, তা নিয়ে নৌকার মধ্যে কোন
আলাপ বা কথা বলতে নিষেধ করল। কারণ
রাত এ নৌকা চালালে নাকি মাঝে মাঝেই কিছু
উদ্ভট টাইপ এর জিনিষ তারা দেখতো।
তো যাত্রীরা আর এ নিয়ে কেউ কোন
কথা বললো না।
আস্তে আস্তে নদীটাও শান্ত হয়ে এলো,
আর মজার ব্যাপার হল যে, কুয়াশাও
কিছুক্ষণ এর মাঝে কমে গেল।
এভাবে কিছুক্ষণ প্রায় আধ ঘণ্টা চলার পর
তারা অর্থাৎ তাদের নৌকা বাহাদুরাবাদ
বাজার নৌকা ঘাটে এসে পৌঁছলো। তখন
ভাইয়া নৌকা থেকে নেমে অটো রিক্সা ও
তারপর দেওয়ানগঞ্জ এসে সি এন
জি নিয়া বাড়ি চলে এলো। এই হচ্ছে ঘটনা।
তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এর কিছুদিন পর
ভাইয়ার দূরসম্পর্কের একজন দাদুর
কাছে ভাইয়া এই ঘটনাটা বলতেই
উনি আশ্চর্য হয়ে বললেন, যে ১৯৬৫-৬৬
সালের দিকে দেওয়ানগঞ্জ এর
পুল্লাকান্দি নামের একটি গ্রাম এ
প্রভাবশালী এক মোল্লা ছিল যে কিনা দাদন
বা সুদ এর ব্যবসা করত, আর তাঁর
ছেলে কে ঐ সময় বিয়ে করিয়ে নদী পথে বর
কনে সহ সবাই বাড়ি ফেরার সময়, প্রচণ্ড
ঝড়ে তাদের লঞ্চটা নদীর ঐ জায়গায়
ডুবে যায়।আর লঞ্চ এর ৪০ জন এর
মতো যাত্রী আর ১০ জন এর
মতো মাঝি মাল্লা যারা দাঁড় টেনে লঞ্চ এর
মতো বড় নৌকা টা চালাতো তারা সবাই
নিখোঁজ হয়ে মারা যায়। ভাইয়া তার মুখে এই
কথা শুনে সেদিন না যতটুকু ভয়
পেয়েছিলো তার চেয়ে বেশি ভয় পায় কারণ
সেদিন কার নৌকার ঘটনাটা ভাইয়া ও ঐ
নৌকার ১১ জন যাত্রী আর ৩ জন নৌকার
মাঝি সবাই দেখেছিলো ।আর ভাইয়া আজও
সেই ঘটনার ব্যাখ্যা খুঁজে বেড়ায়