শাহীন ফিরে এসেছে
আত্মহত্যা করে মারা যাওয়া শাহীন কে কবর দিয়ে আসার এক ঘন্টা পরেই মসজিদের মোয়াজ্জেম সাহেব দেখেন মসজিদের পাশে একটু ধুরে বড় কড়ই গাছের একটি ডালে সাদা কাফন পরিহিত একটি অবয়ব বসে আছে।মোয়াজ্জেম সাহেব ছিলেন খুবই সাহসী লোক।তিনি বিষয়টি ক্লিয়ার করার জন্য আর একটু কাছে যেয়ে দেখেন এটা সেই শাহীন যাকে সে কিছুক্ষণ আগেই দাফন করে এসেছে।
মোয়াজ্জেম সাহেব এই দৃশ্য দেখে তিনি বুঝে গেলেন এটা শাহীন নয়।শাহীন এর রুপ ধরে এসে দুষ্ট জ্বিন।তিনি তখন সেই শাহীন রুপী জ্বিন কে বললেন শাহীন তোর জায়গা তো এখানে নয়?
তুই এখানে কি করিস?তোর জায়গা যেখানে তুই সেখানে যা।শাহীন করুন কণ্ঠে উত্তর দিলো আমার সেখানে খুব কষ্ট হচ্ছে মোয়াজ্জেম সাহেব।আমি ওখানে যাবো না।আমি এখানেই থাকবো।তখন মোয়াজ্জেম সাহেব রাগী কন্ঠে বললেন তুই কি এখান থেকে যাবি নাকি আমি ব্যাবস্থা নিবো?
হুজুরর মুখে এই কথা শুনে শাহীন রুপী সেই দুষ্ট জ্বিন পাখিরা যেভাবে উড়াল দেয় ঠিক সেই ভাবে উড়াল দিয়ে গ্রামের দিকে চলে যায়।হুজুর তো ভয় পেয়ে যান।হুজুর বুঝতে পারেন এই দুষ্ট জ্বিনের অত্বাচার শুরু হবে এখন এই গ্রামে।
ঘটনার শুরুতে যাওয়া যাক। শাহিন নামে যে ছেলেটির কথা বললাম সে ছিল সেই গ্রামের সবচেয়ে সুন্দর একটি যুবক। বয়স বেশি নয় ১৮ কিংবা ১৯ হবে। হঠাৎ করেই হঠাৎ করেই সে তার বাবা-মার কাছে বায়না ধরে সে বিয়ে করবে। তার বাবা মা এ কথা শুনে অবাক এত অল্প বয়সে ছেলে বিয়ে করার জন্য পাগল হলো কেন?
শাহীন একেবারে পুরো বাড়ি মাঁথায় তুলে নিয়েছে তাকে বিয়ে দিতেই হবে। শাহীনের বাবা-মা তো কোন ভাবেই রাজি হচ্ছে না। কারণ এত অল্প বয়সে কোনো বাবা মাই তার ছেলেকে বিয়ে দিতে চাইবে না। শাহীনের বাবা মা যখন রাজী হচ্ছিলো না তখন শাহীন তার বড় বোনের বাসায় যেয়ে তার দুলাভাই এবং বোন কে রাজী করালো।
যাইহোক তার দুলাভাই এবং বোন তাদের বাড়িতে আসলো।এসে শাহীনের বাবা মা কে বুঝানোর ফলে তারা শাহীন কে বিয়ে দিতে রাজী হয়।সেদিনই তারা পাশের গ্রামের একটি মেয়ে দেখতে যায় শাহীনের জন্য।শাহীন সেই মেয়েকে দেখে খুবই পছন্দ করে ফেলে। এবং সে বায়না ধরে তাকে আজকের ভিতরেই বিয়ে দিতে হবে।
তার বাবা মতো কোনোভাবেই এটা মেনে নিতে পারছে না। তখন শাহীন কি করল বাড়িতে এসে অনেক চিল্লাফাল্লা কান্নাকাটি শুরু করলো। একপর্যায়ে শাহীন তার ঘরে থাকা ইদুর মারার ঔষধ নিয়ে তোর বাড়ির বাহিরে চলে যায়। তখন তার বাড়ির লোকেরা ভেবেছিলো হয়তো এমনি কোনো কাজে যাচ্ছে।কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর গ্রামের এক মহিলা আবার শাহীন কে দেখে ফেলে।তখন সেই মহিলা শাহীন কে বলে কিরে শাহীন তুই এখানে কি করিস?
শাহীন কোনো উত্তর না দিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।তখন সেই মহিলার খানিকটা শাহিনের উপর সন্দেহ হয়। শাহীন যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলে সেই মহিলা ঠিক সেই বরাবর যায়।আর সেখানে যেয়ে তিনি ইদুর মারার বিষের গন্ধ পান। তার আর বুঝতে বাকি রইল না শাহীন বিষ খেয়েছে।
তাই সে দৌড়ে শাহীনদের বাড়িতে ছুটে গেল। ঘটনাটি শাহিনের বাবা-মা সবার কাছে বল্লো।সবাই এই ঘটনা শুনে শাহীনকে খোঁজার জন্য ছুটে যায়। অবশেষে তারা শাহীন কে খুঁজে পায়।তখন শাহীনের পুরো শরীর থেকে বিষের গন্ধ আসছিলো।সবাই তাকে জিজ্ঞেস করে তুই কি বিষ খেয়েছিস নাকি গায়ে মেখেছিস আমাদের ভয় লাগানোর জন্য। কিন্তু শাহীন কোনো উত্তর দিচ্ছে না।
তখন শাহীনের এক সমবয়সী চাচার একটা বাইক ছিলো।সেই চাচা বাইক নিয়ে শাহীন কে মাঝে বসিয়ে পিছে শাহীনের দুলাভাইকে বসিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। মাঝপথে যেতে যেতে তারা শাহীন কে বলে এখনো সময় আছে বল তুই কি বিষয় খেয়েছিস কিনা?
কিন্তু শাহীন কোনো উত্তর দিচ্ছে না।একপর্যায়ে শাহীনের দুলাভাই শাহীন কে দুইতিন বার পিছন দিয়ে ঝাকি দেয়ার পর শাহীন একটি ভয়ানক তথ্যা দেয়। শহীন বলে দুলাভাই আমি বিষ খেতে চাইনি।
আমি চেয়েছিলাম সবাইকে ভয় লাগাবো।আমি চেয়েছিলাম কিছু বিষ আমার গায়ে মাখিয়ে হালকা করে একটু খেয়ে নিবো যাতে আমার কোনো বড় ধরনের ক্ষতি না হয়।কিন্তু আমি যখন হালকা বিষ খাওয়ার জন্য আমার মুখের কাছে বোতল নেই। তখন আমার মনে হলো আমাকে কেউ জোর করে ধরে পুরো বিষ টা খাইয়ে দিয়েছে।
এই কথা শুনে তো শাহীনের দুলাভাই আর চাচা অবাক।এটাও কি সম্ভব। অবশ্য এটাই ছিলো শাহীনের বলা শেষ কথা।আমি মৃত্যুর আগে অবশ্যই কোনো লোক মিথ্যা কথা বলবে না। এরপর যখন শাহীন কে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয় তখন ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে।
No comments :
Post a Comment