একটি সত্যি ঘটনা যা বছর চারেক আগে আমার সাথে ঘটেছিলো

এটি একটি সত্যি ঘটনা যা বছর চারেক আগে
আমার
সাথে ঘটেছিলো।। সে রাতে আমি আমার
গ্রামের
বাড়ি চট্রগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশে
ফিরছিলাম।।
প্রায় ঘণ্টা তিনেক একটানা গাড়ি
চালিয়ে কিছুটা
ক্লান্ত ছিলাম।। কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটার
চিন্তায় এক
মুহূর্তের জন্যও অসতর্ক হই নি।।
রাত তখন প্রায় ২ টার মতো বাজে।। এতো
রাতে
ঢাকায় ফেরার মূল কারন হল, তারপরের দিন
সকাল
১০ টায় আমার অফিসে একটা জরুরী মিটিং
আছে।।
যাই হোক, আসার পথে খাজা বাবার
মাজার নামে
একটা জায়গা পড়ে।। সেই জায়গা নিয়ে
অনেক
কুসংস্কার রয়েছে, যে সেখানে নাকি প্রচুর
পরিমাণ
দুর্ঘটনা ঘটে।। চালক প্রায়ই গাড়ির
ব্যাল্যান্স
হারিয়ে ফেলে, অথবা ব্রেক জ্যাম হয়ে
যায়
ইত্যাদি
ইত্যাদি।। রাস্তা মোটামুটি ফাঁকা ছিল।।
শুধুমাত্র
রাস্তায় কিছু ট্রাক আর গুটিকয়েক
প্রাইভেট কার।।
আমি আনুমানিক ৭০-৮০ কিমি বেগে গাড়ি
ছুটাচ্ছিলাম।। রাস্তার উপর তীক্ষ্ণ নজর।।
হটাত
একটা মোড় ঘোরার সময় আচমকা দেখলাম
একটা লোক
রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে আছে।। লোকটার
পড়নে
একটা
ছেড়া ফাটা হাফ প্যান্ট।। গায়ে কোনো
কাপড়
নেই।।
মুখে জঙ্গলের মতো দাড়ি।। চোখগুলো
আলো
পড়ে
ঝিকঝিক করছে।। হলদে দাঁতগুলো দেখে
অন্য সময়
হয়তো ঘেন্না লাগতো।। কিছুক্ষণের মধ্যে
আমার
গাড়ি তার গায়ে আঘাত করবে অথচ মুখে
হাসি
নিয়ে
তাকিয়ে আছে আমার গাড়ির দিকে।।
ক্ষণিকের জন্য
স্তব্ধ হয়ে গেলাম।। ব্রেক চেপে ধরবো যে,
সেই
চিন্তাও তখন মাথায় আসছিলো না।। সত্যি
করে
বলতে
গেলে, যেই স্পীডে গাড়ি চালাচ্ছিলাম,
সেই
স্পীডে
ব্রেক করলেও তা ঐ লোকটাকে সজোরে
ধাক্কা
দিবে।।
নিজেকে ফিরে পেলাম হটাত।। প্রানপ্রনে
ব্রেক
চেপে ধরলাম।। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না।।
গাড়িটি
হেঁচড়ে যেতে লাগলো লোকটির দিকে!!
একদম
শেষ
মুহূর্তে চোখটা আপনাআপনি বন্ধ হয়ে
গেলো।। আশা
করছিলাম, গগন বিদারি কোনো চিৎকার
শুনবো,
কিন্তু
অবাক করে দিয়ে কানে এলো কেউ যেনও
পাগলের
মতো
হেসে উঠলো।।
আমার গাড়ি লোকটাকে ভেদ করে চলে
গেলো।।
বেধ
করে বলছি কারন, আঘাতের কোনো শব্দ
আমি পাই
নি।।
যাই হোক, সজোরে ব্রেক চাপায় গাড়িটি
২০-২৫
মিটার সামনে গিয়ে থেমে গেলো।। দ্রুত
দরজা
খুলে
বের হলাম।। আশ্চর্য, এতক্ষণ রাস্তায় অনেক
গাড়িকেই সাইড কাটিয়েছি।। অনেক
গাড়িই
আমাকে
পাশ করে সামনে এসেছে, কিন্তু এই মুহূর্তে
যতদূর
দৃষ্টি যায় কোনো গাড়ি দেখতে পাচ্ছি
না।। যাই
হোক, এতো কিছু ভাবার মতো শক্তি তখন
ছিল না।।
প্রায় দৌড়ে সেই জায়গায় এলাম যেখানে
লোকটিকে
দেখতে পেয়েছিলাম।। কিন্তু, এসে কাউকে
দেখলাম
না।। ভাবলাম ধাক্কা খেয়ে হয়তো ছিটকে
দূরে
গিয়ে
পড়েছে।। প্রায় মিনিট দশেক আঁতিপাঁতি
করে
খুজলাম।। কিছুই দেখলাম না।। আমাকে
আরো অবাক
করে
দিয়ে রাস্তাটা নির্জনই রইলো।। একটা
গাড়ি
দেখলাম না।।
একরকম অমানুষিক কষ্ট উপলদ্ধি করলাম
মনের
ভেতর।। একটা মানুষকে মেরে ফেলেছি!! সে
রাতে
বহু
কষ্টে গাড়ি চালিয়ে বাসায়
ফিরেছিলাম।।
অফিসের
মিটিংটা জয়েন করে এরপর এক সপ্তাহের
ছুটি
নেই।।
আমার ঢাকার বাসায় আমি এবং আমার
ওয়াইফ
থাকতাম।। তাকে কিছু বলিনি।। পাছে, ভয়
পায় বা
আমাকে খারাপ ভাবে।।
আমার আচার আচরণ দেখে আমার ওয়াইফের
মনে
সন্দেহ দানা বাঁধতে লাগলো।। এদিকে
আমি
মোটামুটি শপথ করেছি যে তাকে কিছু
বলবো না।।
যাই হোক, আমার ওয়াইফের পিড়াপীড়িতে
পড়ে
অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম আবার দেশের
বাড়িতে
যাবো।। সেদিন শকালেই আবারো
চট্রগ্রামের
উদ্দেশে রওনা হই আমরা।। এবার আমার বউ
ছিল
সাথে।।
দেশের বাড়িতে আমরা ২দিন ছিলাম।।
হটাত
একদিন
বিকেলে ফোন এলো অফিস থেকে।। কিছু
বিদেশী
ক্লায়েন্ট এসেছে।। আমার উপস্থিতি খুব
করে
দরকার।। আমার ছুটির তখনো ২দিন বাকি।।
তাই
প্রথমে আমার বউ খুব করে আপত্তি
জানালো।।
কিন্তু,
তাকে বুঝিয়ে বলতে সে মেনে নিলো।।
বুঝতে এবং
বুঝাতে ভালোই সময় ব্যায় হলো।। সেদিন
রাত
১১টার
দিকে পুনরায় ঢাকার উদ্দেশে রওনা হই
আমরা।।
এদিন আমি গাড়ি খুব ধীরে চালাচ্ছিলাম।।
স্পীড
কোনো অবস্থাতেই ৪০-৫০ এর বেশি
উঠাচ্ছিলাম
না।। আমি গাড়ি চালাচ্ছি।। আমার বউ
পাশে বসে
গান শুনছে।। আস্তে আস্তে আবারো সেই
রাস্তায়
চলে
এলাম, যেখানে গতদিন এক্সসিডেন্টটা
করেছিলাম!!
খারাপ লাগা ভাবটা ফিরে এলো আবার।।
রাস্তার
উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছি।। হটাত আমাকে
চমকে
দিয়ে
রাস্তার ঠিক ঐখানটায় আজকেও ঐ
লোকটিকে দেখতে
পেলাম।। সাথে সাথে আমার বউকে ধাক্কা
দিয়ে
বললাম, সে কি কিছু দেখতে পাচ্ছে কিনা!!
গান
শুনতে থাকলেও তার চোখ খোলা ছিল।।
আমি ধাক্কা
দিতেই কান থেকে হেডফোন নামিয়ে বলল,
“আশ্চর্য!!
এই লোক হটাত করে কোত্থেকে উদয় হলো!!”
আমার আর
প্রশ্ন করা লাগলো না।। যা জিজ্ঞেস
করতে
নিয়েছিলাম তার উত্তর এমনিতেই পেয়ে
গেলাম।।
ব্রেক করে গাড়ি থামালাম।।
আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, গাড়ি থামানোর
সাথে
সাথে লোকটা যেনো হাওয়ায় মিলিয়ে
গেলো।।
আমার
বউয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও নিজেও
ব্যাপারটা
ধরতে পেরেছে।। ভয় সতন্ত্র গলায় বলল,
“লোকটা
কোনদিকে গেলো??”
আমার কাছে কোনো উত্তর ছিল না।। শুধু
অবাক হয়ে
তাকিয়ে রইলাম খোলা রাস্তার দিকে।।
.