শেকলের ঝনঝন শব্দ প্রতি রাতেই এমন একটা শব্দ হয় ঠিক মধ্য রাতে

•• শেকলের ঝনঝন শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। এখানে আসার পর থেকে প্রতি রাতেই এমন একটা শব্দ হয় ঠিক মধ্য রাতে। কেউ যেন অনেক কষ্টে টেনেহিঁচড়ে একটা শিকল নিয়ে বাড়ির এমাথা থেক পুবের কড়ই
গাছটার পাশ কাটিয়ে কলের গোড়া বরাবর আর একটু সামনে মাঝ উঠান বরাবর গিয়ে থামে। তারপর ঝুপ করে একটা শব্দ হয়েই সব কিছু আগের মত নিরব হয়ে যায়। এটা আজকে সহ এই চারদিন দেখলো মিতু। ও এখানে এসেছে একটা নামীদামি কলেজে ভর্তি হবার জন্য কোচিং করতে। কোচিং সেন্টারটা মূল শহরে তাই তার আশেপাশে থাকবার জায়গার ভাড়া অনেক বেশি। এত টাকায় ভাড়া থাকার সামর্থ্য তার নেই তাই সে তার এক বন্ধুর
মামার সাহায্যে কম দামে বাসাটা ভাড়া করে নিলো থাকবার জন্য। বাসাটা শহর থেকে বিশ মিনিটের হাটা পথ তাই সে প্রতিদিন হেটেই যায়। এতে তার কোন অভিযোগ নেই। বাড়িটা যে অল্প দামে ভাড়া পেয়েছে এটাই তার কাছে অনেক কিছু। যা হোক আপাতত সে একাই থাকে আরো দুজন আসবে তার সাথে থাকতে। একজন আসবে আগামীকাল বিকালে,আর একজন শনিবারে। এখন মিতু ভাবছে শেকলের ঝনঝনানিটা হয়তো তার কল্পনা। অনেক রাত জেগে পড়ালেখা করার কুফল তাই সে কেরোসিনের বাতি নিভিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। পরদিন আসলো একজন সেও শুনলো শব্দটা। পরদিন দুজন মিলে ঠিক করলো ঘটনাটা কি আজ দেখার চেষ্টা করবে। রাত একটা, ঝনঝন শব্দটা আস্তে আস্তে বাড়তে লাগলো। ওরা দুজন পা টিপে টিপে শব্দটার পিছু নিলো। আস্তে আস্তে শব্দটার কাছাকাছি আসার পর দেখলো একটা মানুষ যার সারা শরীর শেকল দিয়ে বাধা।
কিভাবে যে এতগুলো শেকল নিয়ে লোকটা হাটছে ওরা বুঝতেই পারলো না। ওরা কিছু বলার আগেই মাঝ উঠান বরাবর এসে শব্দটা থেমে গেল এবং সামনে দাড়ানো মানুষটা মনে হয় একটা গর্তে পড়ে গেল। ওরা দৌড়ে গিয়ে দেখলো ওখানে কিছুই নেই, আছে শুধু একটা বৃত্ত। ওরা ভয়ে ভয়ে ঘরে ফিরে আসল। পরদিন কেয়ারটেকারকে ঘটনাটা খুলে বলার পর সে বললো যুদ্ধের সময় বাড়িটা শত্রু পক্ষের ক্যাম্প ছিলো। তারা এখানে একজন বড় মাপের নেতাকে এনে খুন করে যার লাশটার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। এবার ওরা ঠিক করলো জায়গাটায় কি আছে সেটা দেখবে। তাই তারা মাটি খোড়ার জন্য কোদাল নিয়ে আসলো এবং মাটি খুড়তে আরম্ভ
করল। কিছুদূর খোড়ার পরই ঠং করে কোদালটা লোহার মত কিসে যেন বাড়ি খেলো। আর একটু খুঁড়তেই একটা বাক্স বেরিয়ে আসলো। বাক্সের ভিতর পাওয়া গেল সারা শরীর শেকল দিয়ে প্যাঁচানো একটা কঙ্কাল। ওরা তো অবাক হয়ে গেল। গত রাতের দেখা মানুষটার শরীরটাও ঠিক এমনভাবে শেকল দিয়ে লাগানো ছিলো। তারপর লাশটা থানায় দিয়ে দেয়া হয়। কঙ্কালটার সাথে কিছু কাগজ ছিলো সেটা দেখে তার পরিচয় শনাক্ত করা হয়। এবং তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর আর কখনো ওরা সেই ঝনঝন শব্দটা শুনতে পায়নি। তাহলে কি ওই কঙ্কালটাই রাতে হাটাহাটি করতো ওখান দিয়ে? যদি তাই হয়, একটা মরা মানুষ কিভাবে এমনটা করতে পারে! রাতে কি তাহলে ও জীবিত হতে পারতো?
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
sr7themes.eu.org