পেত্নীর প্রেম

-তোমার ভয় করছে না ?
নীলির কথা শুনে আমি খানিকটা হেসে
দিলাম । বললাম
-আমাকে দেখে কি মনে হচ্ছে আমার ভয়
করছে ?
নীলি কিছু না বলে কেবল আমার দিকে
তাকিয়ে রইলো । জানালার ওপাশটা
বেশ অন্ধকার । আমি নীলির চেহারা
পরিস্কার বুঝতে পারছি না তবে কেন
জানি মনে হল ও গভীর চোখে আমার
দিকে তাকিয়ে আছে । ওর চোখ একটা
বিশ্ময় কাজ করছে ।
কে বলে যে কেবল মানুষেরাই বিশ্মিত
হতে পারে !! অশরীরীরাও যে বিশ্মিত
হতে পারে তা নীলির চেহারা না
দেখলে আমি ঠিক মত বুঝতে পারতাম
না !
নীলি জানালা ভেদ করে আমার ঘরে
চলে এল । যেমন করে আমরা দরজার পর্দা
সরিয়ে ঘরে ঢুকি ঠিক সেভাবে ।
ব্যাপার টা এমন যেন খুব স্বাভাবিক
একটা ঘটনা । অন্য কেউ হলে এতোক্ষনে
মনে হয় চিৎকার চেঁচামিচি করে কানের
পর্দা ফাটিয়ে ফেলতো আমি নিজেকে
সামলে নিলাম । তবে এই সামলে
নেওয়াটা এমনি এমনি হয় নি !
এখানে ভাড়ায় এসেছি খুব বেশি দিন হয়
নাই । প্রথমেই যখন এখানে ভাড়ায় আসি
ঘর ভাড়া শুনে একটু অবাকই হয়েছিলাম ।
তার উপর আমি ব্যাচেলর জেনেও
আমাকে যখন ভাড়া দিতে রাজি হয়ে
গেল তখন আসলেই একটু অবাক না হয়ে
পারলাম না !
এমন ফ্যামিলি বাসায় সহজে বাড়ির
মালিকেরা ব্যাচেলরদের বাসা ভাড়া
দিতে চায় না ! অন্য সব ফ্লোর গুলো
ভাড়া দেওয়া কেবল এই ফ্লোরে কেউ
নেই । তখন অবশ্য কোন প্রকার সন্দেহ হয়
নাই ।
আমি নিশ্চিন্তে উঠে গেলাম । সব থেকে
বড় সুবিধা হল আমার অফিস থেকে বাসা
টা থেকে একদম কাছে । হেটে যাওয়ার
দুরুত্বে । কদিন ভালই কাটছিল । কেবল
সমস্যা ছিল যে রাত হলেই আমার ঘর টা
একটু বেশি ঠান্ডা হয়ে যেত । ভালই হত
যে প্রচন্ড গরম ছিল বাইরে কিন্তু আমি
এসি চালু না করেও ঠান্ডার আরাম
পেতাম ।
আরেক টা ব্যাপার যে বাড়ির মালিক
প্রতিদিন সকালে এসে আমার খোজ খবর
নিয়ে যেত । আমার কোন সমস্যা হচ্ছে
কি না কিংবা আমি ভাল আছি কি না !
কথা বলার সময় বাড়িওয়ালার চেহারায়
একটা অন্য রকম দুষ্চিন্তার ছাপ দেখতে
পেতাম । তবে আমি যখন বলতাম কোন
সমস্যা নেই তখন ভদ্রলোকের চেহারা
দেখে মনে হত যেন বুকের ওপর থেকে ১০
মণের একটা পাথর সরে গেল ।
আমার তারপর থেকেই খানিকটা সন্দেহ
তৈরি হল । এখন সন্দেহ তৈরি হলেই তো
বাড়ির মালিকের কাছে গিয়ে বলা যায়
যে আঙ্কেল আপনার বাড়িতে কি কোন
ভুত আছে ! আর জানতে চাইলেই উনি
কেনই বা বলবেন ? তার উপরে বাড়ি
থেকে চলে যেতে বলতে পারেন । আমি
কেন এতো চমৎকার জায়গা ছাড়বো !!
তবে একদিন পাড়ার দোকানের কাছে
জানতে চাইলাম । প্রথমে তো ব্যাটা
বলতেই চায় না । তবে আমি ঐ ফ্ল্যাটে
দুই সপ্তাহের উপরে আছি এবং
নিশ্চিন্তে আছি দেখে দোকানদার বেশ
অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো ।
তারপর গলা নীচ করে যা বলল তার
সারমর্ম হল আমি যেই ফ্ল্যাটে থাকি
সেই ফ্ল্যাটে নাকি একটা ভুত থাকে ।
ঠিক ভুত না মহিলা ভুত । সোজা ভাষায়
পেত্নী ! মেয়েটার নাকি ওখানে মারা
গিয়েছিল । মেয়েটার নাম ছিল নীলি !
এর আগে ঐ ফ্ল্যাটে কেউ নাকি এক
সপ্তাহের বেশি থাকতেই পারে নাই ।
আমি সপ্তাহ দুয়েক কিভাবে আছি এই
নিয়ে তার বিশ্ময়ের শেষ নাই ।
আমি হেসে উড়িয়ে দিল । সদাইপাতি
কিনে নিয়ে হাজির হলাম বাসায় !
বাসায় আসার পরেই আমি ব্যাপার গুলো
একটু চিন্তা করতে শুরু করলাম ! যতই হেসে
উড়িয়ে দেই নিজের মনে মনে একটু কিছু
ভয় কিংবা সন্দেহ ততক্ষনে তৈরি হয়ে
গেছে ! আসলেই কিছু একটা আছে এই
বাসা ! বিশেষ করে ঠান্ডার বিষয় ।
তাছাড়া আরেকটা ব্যাপার আমি আগে
লক্ষ্য করি নি তবে লক্ষ্য করা দরকার
ছিল মনে হচ্ছে ।
আমি এমনিতেও বাইরেই খাওয়া দাওয়া
করি । তবে মাঝে মাঝে চরম ক্ষুদার
মুহুর্তে যখন বাইরে যেতে ইচ্ছে করে না
তখন ঘরেই কিছু বানিয়ে নেই । এই দুই
সপ্তাহে দুবারের মত এমন হয়েছে ।
রাতের বেলা যখন ক্ষুদা লেগেছিল তখন
একবার বোম্বাই টোস্ট আর খিচুরী
রেঁধেছিলাম । সেগুলোর বাসন আমি
আধোয়া অবস্থায়ই রেখেছিলাম সকালে
পরিস্কার করবো বলে । সকালে অফিসে
চলে যাওয়ার ফলে আর করা হয় নাই ।
কিন্তু বাসায় এসে দেখি সেগুলো
পরিস্কার করা । পরে আমার মনে
হয়েছিল আমিই হয়তো সেগুলো পরিস্কার
করে রেখেছি ! আমার মনে নেই !
যাক আমি আর বেশি চিন্তা করলাম না ।
যেই থাকুক যদি সত্যিই থেকে থাকে
তাহলে সে যে আমার কোন ক্ষতি করবে
না সেটা আমি পরিস্কার বুঝতে পারছি !
যদি ভয় দেখতো তাহলে এতো দিন
সমানে চলে আসতো !
নীলিকে দেখি আরও সপ্তাহ খানেক
পরে । আমি অফিস থেকে ফিরে এসেছি
সবে মাত্র । সেদিন কাজের খুব চাপ ছিল
। বাসায় আসতে আসতেই রাত প্রায় ১০ টা
। ঘরে ঢুকে আমার শরীর যেন আর চলছিল
না । দরজা থেকে জামা কাপড় খুলতে শুরু
করলাম । লক্ষ্য কেবল বিছানা ! আগে
ঘন্টা খানেক ঘুমানোর ইচ্ছে তারপর অন্য
কিছু চিন্তা করা যাবে ! খেয়েই এসেছি
সুতরাং কোন চিন্তা নেই ।
আমি জুতা মোজা খুলে খুলে এদিক ওদিক
ফেলতে ফেলতে শোবার ঘরের দিকে
এগুচ্ছি তখনই পেছন থেকে ঠান্ডা মিহি
কন্ঠে একজন বলে উঠলো
-এতো অগোছালো কেন আপনি ?
আমি কিছুক্ষন কোন কথা বলতে পারলাম
না । একেবারে যেন চুপ হয়ে দাড়িয়ে
গেলাম ! লক্ষ্য করলাম আমার পা টা
খানিকটা যেন কাঁপছে । আমার হয়তো
প্রথমে ভাবা দরকার ছিল যে অন্য কেউ
আমার ঘরে ঢুকেছে । কিন্তু কন্ঠটিতে
এমন কিছু ছিল যে আমার পুরো শরীর
কেঁপে উঠলো ! ঘরের তাপমাত্রা ততক্ষনে
অনেক নেমে এসেছে । আমার খানিকটা
শীত শীত করতে লাগলো !
আমি নিজেকে বুঝাতে চেষ্টা করলাম
যে এইটা আমার কোন ক্ষতি করবে না ।
কোন ক্ষতি করবে না ! এইটা একটা ভাল
ভুত ! ভাল পেত্নী ! সুইট পেত্নী !! খুব
বেশি কাজ হচ্ছিল না । প্রবল ইচ্ছে
করছিল সামনের ঘরের দিকে দরজা বন্ধ
করে দেই কিন্তু ইচ্ছে টা দমন করলাম !
অনেক সাহস সঞ্চয় করে পেছনে
তাকানোর প্রস্তুতি নিলাম !
আমি ঘুরে তাকিয়ে দেখি সেখানে কেউ
নেই । তবে আমার ছোড়া জামা কাপড়
আর জুতা মোজা গুলোও গোছানো
রয়েছে । আমার মনে হল মেয়েটা চলে
গেছে । কারন তাপমাত্রা আবারও
বাড়তে শুরু করেছে ।
এরপর মেয়েটার অদৃশ্য কন্ঠ শুনলাম বেশ
কয়েকবার । প্রত্যেকবার আমার
অগোছালোতার জন্য মৃদু শাসন ! আমি
আবিস্কার করলাম যে মেয়েটাকে আমার
আর ভয় লাগছে না মোটেই !
গত কালকে আমি অফিস যাওয়ার আগে
একটা ছোট্ট নোট লিখে রেখে গেলাম
আমার অগোছালো শার্টের উপর !
"আমি তোমাকে দেখতে চাই"
নিজের কাছেই কিছুটা হাস্যকর
শোনালো যে আমি একটা পেত্নীর সাথে
দেখা করতে চাচ্ছি ! মানুষ জন শুনলে কি
ভাববে কে জানে !
অফিস থেকে ফিরে এসেও তার কোন
খোজ পেলাম না । তবে আমার শার্ট
খানা ঠিকই গোছানো ছিল !
রাতের ঘুমাতে যাবার আগে জানলার
দিকে তাকিয়েছি তখনই একটা ছায়া
মূর্তি দেখতে পেলাম । প্রথমে বুকের
ভেতরে ধক করে উঠলেও সামলে নিলাম
পরক্ষনেই ! নিজেই এগিয়ে গেলাম
সামনে । ছায়াটা তখনও জালনার
ওপাশেই রয়েছে চুপচাপ ! আমি আগে
গিয়েই জানতে চাইলাম
-তুমি কি এসেছো ?
তখনই নীলি জানতে চাইলো কথাটা !
ঘরের আলোতে মেয়েটা যখন এলো আমি
খানিকটা অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম
বহুদিন আমি এতো সুন্দর মুখ দেখি নি !
আমি কিছুটা সময় কোন কথা বলতে
পারলাম না ! কেবল চেয়ে রইলাম !
নীলি বলল
-কি পেত্নীর চেহারা দেখে খুব পছন্দ
হয়েছে ?
বলেই খুব জোরে হাসতে লাগলো ! আমি
বললাম
-বিশ্বাস হচ্ছে না ! আমাদের ছোট বেলা
থেকে যা শেখানো হয় শাক চুন্নী আর
পেত্নী বিষয়ে তা দেখি পুরাই উল্টা !
নীলি আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তুমি বেশ সাহসী দেখছি ! এর আগে
মানুষ গুলো বেশ ভীতু ছিল ! যাক ভাল
তোমার সাথে টুকটাক কথা বলা যাবে !
-চাইলে প্রেমও করতে পারো !
-আচ্ছা ! তাই ?
-জানি সুন্দরী পেত্নী প্রেম করা সুবিধা
কি ?
-কি শুনি ?
-পেত্নীর বাবা তাকে বিয়ে দেওয়ার
জন্য চাপ দিতে পারবে না ! বিয়ে হয়ে
যাওয়ার সম্ভবনাও নেই !
এই কথাটা বলার পরই দেখলাম নীলির
মুখটা কেবল মলিন হয়ে গেল ! আমার
দিকে তাকিয়ে বলল
-আচ্ছা আমি যাই !
-সেকি ! কোথায় ? আমার কথায় কষ্ট
পেলে নাকি !
-না ঠিক আছে !
-না ঠিক নেই । আমাকে বলবা তারপরপ
যাবা !
নিজের কন্ঠ শুনে নিজেই অবাক হয়ে
গেলাম । আমি একটা অশরীরীর সাথে
আর্গুমেন্ট করতেছি । আমার বলার ধরনই
কি না জানি না নীলি আবারও হেসে
ফেলল ! তারপর আমার দিকে তাকিয়ে
বলল
-তোমরা যা মনে কর আমরা কিন্তু আসলে
এতোটা ফ্রী না ! তোমাদের যেমন
নিজেরদের জগৎ আছে ঠিক আমাদেরও
নিজেদের জগৎ আছে । আমাদের
সেখানেও থাকতে হয় !
-তাহলে আমাদের জগতে !!
-আসলে যাদের মৃত্যু স্বাভাবিক হয়
তাদের সাথে এই জগতের একটা সংযোগ
স্থাপন হয়ে যায় ! চাইলেও আমরা এখান
থেকে নিজেদের কে সরিয়ে রাখতে
পারি না ! বুঝছো ! ইচ্ছে করে থাকি না !
-হুম । বুঝলাম ! তা কখন আসবা আবার ?
-আসলেই টের পাবা ! এখন যাই !
নীলির অনেক কিছুই জানা হল না তবে
মেয়েটা আবার আসবে ! তখন ওর সাথে
চুটিয়ে আড্ডা দেওয়া যাবে ! নীলি
যেভাবে জানালা ভেদ করে এসেছিল
ঠিক সেভাবেই চলে গেল । আমি নিজের
বিছানার দিকেক রওনা দিলাম ঘুমানোর
জন্য !
##
-আচ্ছা তোমরা আমাদের কি মনে কর
বলতো ?
-কি আবার মনে করবো ? এতো দিন যা
শুনে এসেছি তাই তো মনে করবো !
-কি শুনেছো ? কোথায় শুনেছো ?
-না মানে ভুত এফএম !
ভুত এফএমের নাম শুনতেই নীলির মুখটা
বিরক্তিতে ভরে গেল । আমার দিকে
তাকিয়ে বলল
-তোমার ঐ আরজে না ফারজে কে যদি
আমি সামনে পেতাম না তাইলে তারে
গাল থাপড়াইরা লাল করে দিতাম ! বেটা
ফাজিলের এক শেষ ।
-তার মানে কিচ্ছু সত্যি না !
-অবশ্যই না !
-তাহলে ? এই যে এতো মানুষ মরে
কিভাবে ?
-আশ্চর্য আমরা কিভাবে কিভাবে মরে !
আমরা জানি নাকি ! নিজেরা নিজেরা
ভয় পেয়ে মরলে আমাদের কি করার আছে
। আমাদের তো খেয়ে দেয়ে কাজ নেই
তোমাদের ভয় দেখাবো ! হুহ !!
আমি বললাম
-আচ্ছা তোমাদের পৃথিবীটা কেমন ?
নীলি কি যেন ভাবলো ! তারপর বলল
-কি ভাবে বলব ! আচ্ছা শুনো তোমাকে
একটা কথা বলি । ভাল করে বললে
আমাদের পৃথবীটা কিন্তু অনেক টা
তোমাদের মতই । বলতে পারো একটা
পৃথিবীর প্যারালাল ওয়ার্ড থাকে না
ঠিক তেমন ।
-বুঝলাম না !
ইদানিং বাসায় এসে আমার এক মাত্র
কাজ হচ্ছে নীলির সাথে কথা বলা ।
মেয়েটিও ঠিক যেন আমার জন্য
অপেক্ষা করে । আমি বাসায় আসলে
দেখতে পাই আমার জন্য বাধরুমে গরম
পানি অপেক্ষা করছে । আমি গোসল
করেই টের পাই আমার ঘরের তাপমাত্রা
কেমন ঠান্ডা হয়ে গেছে । আমার বুঝতে
কষ্ট হয় না নীলি চলে এসেছে । আগে
তো আমরা কেবল আমার শোবার ঘরেই
কথা বলতাম এখন বাসার সব জায়গায়
আমাদের দুজনের এক সাথে চলাচল ।
টিভি দেখতে দেখতে কিংবা কারন্ট
করে চলে গেলে বারান্দায় বসে
আমাদের কথা চলে । মাঝে মাঝে আমি
অবাক হয়ে যায় একটা অশরীরির সাথে
আমি কিভাবে এতো কথা বলি ! কেমনে
করে বলি !!
আরেকটা জিনিস যেটা হয়েছে নীলি
এখন থেকে আসার সময়ে সাথে করে কি
যেন একটা নিয়ে আসে । আমরা যেমন
ম্যাঙগো জুস খাই ঠিক তেমনি প্যাক
করা থাকে । তার গায়ে অদ্ভুদ ভাষা কি
যেন লেখা ! ওর কাছে জানতে
চাইছিলাম যে এই জিনিস টা কি ও বলল
যে ওদের ওখানকার একটা খাবার ।
লুকিয়ে আমার জন্য নিয়ে এসেছে ।
আমরা যেমন পাইপ ঢুকিয়ে জুস খাই এই
তেও ঠিক ওমন পাইপ ঢুকিয়ে খাতে শুরু
করলাম । সত্যি বলতে কি এমন অদ্ভুদ
স্বাধের জিনিস আমি এর আগে কোন
দিন খাই নাই । এরপর থেকে নীলি
প্রতিদিন নিয়ে আসতো বলতে গেলে
আমিই ওকে নিয়ে আসতে বলতাম । আর
সাথে সাথে আমাদের আড্ডা তো
চলতোই !
নীলি আমাকে বোঝানোর জন্য হাত টা
তুলল । তারপর মাথায় কি যেন একটু
চুলকালো । তারপর বলতে শুরু করলো
-দেখো আমাদের আর তোমাদের
পৃথিবীটা কিন্তু অনেক টা একই রকম ! যখন
কেউ একজন তার দেহ থেকে মুক্ত হয়ে
যায় তখনই সে আমার দের পৃথিবীতে
প্রবেশ করে কিংবা প্রবেশ করার পথ
খুজে পায় ! বলা চলে তার ভিতর সেই
প্রবেশের পাওয়ার টা চলে আসে । এবং
সত্যি কথা কি যদি একবার সেই এই
পৃথিবীতে প্রবেশ করে ফেলে তাহলে
তাদের আর অন্য কিছু মনে থাকে না !
আমি বললাম
-তাহলে তোমরা আবার এই পৃথিবীতে
কেন ?
-আগে একদিন বলেছিলাম মনে নেই ।
আসলে যারা একটু অপঘাতে পরে তারা
সহজে এই পৃথিবীর মায়া ঠিক মত ছাড়তে
পারে না । তাদের পরিত্রানটা ঠিক মত
হয় না তাই দুই পৃঠিবীর মধ্যে তাদের
বিচরন চলে ! বুঝেছো !
-হুম ! বুঝলাম !
##
-বাবা তোমার শরীর ঠিক আছে তো ?
আমি বাড়িওয়ালার দিকে আরও ভাল
করে তাকাই । ভেবেছিলাম দিন কে উনি
হয়তো আমার খোজ নেওয়া বন্ধ করে
দিবেন বিশেষ করে যখন দেখবেন যে
আমি ঠিক ভয় টয় পাচ্ছি না । তার উপরে
উনার বাড়ি ছাড়ার কোন নামও নিচ্ছি
না । কিন্তু আমার ধারনা খানিকটা ভুল
প্রমানিত করে দিয়েই বাড়িওয়ালা
আমার খোজ খবর নিয়মিত করতে লাগলো
। একদিন তো আমাকে সরাসরি জিজ্ঞেস
করলেন যে
-তোমার শরীর ভাল তো ?
-জি আঙ্কেল ভাল !
-রাতে ঘুম হয় ভাল ?
-জি !
-ও ! না মানে তোমার শরীর কেমন দিন
দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে তো, তাই জানতে
চাইলাম !
-না । আসলে অফিসে খুব চাপ যাচ্ছে
ইদানিং !
-ও আচ্ছা !
আমার কথা শুনে বাড়িওয়ালার মনে হল
ঠিক পছন্দ হল না । তিনি ঠিক বিশ্বাসও
করলেন না মনে হয় । অন্তত তার চোখ
দেখে তো তাই মনে হল ! তিনি আর কিছু
জাতে চাইলেন না ! তবে একটা ব্যাপার
আমার নিজের কাছেও কেমন যেন
লাগলো । ইদানিং সবাই বলছে আমার
শরীর নাকি খারাপ হয়ে যাচ্ছে । কারন
টা আমি নিজেও ঠিক ধরতে পারছি না ।
চোখের নিচে কালি আর গালের হাড়
কেমন যেন বসে যাচ্ছে । কেন যাচ্ছে
আমি ঠিক বলতে পারছি না !
যাই হোক এদিকে নীলির সাথে আমার
সম্পর্কের যেন আরও একটু ধাপ এগিয়ে
গিয়েছে । ও বলতে গেলে আমার বাসার
সব কাজ কর্ম করে ! আমাকে কিছু করতে
হয় না ! সব কিছু সঠিক জায়গায় রেখে
দেয় ! আর প্রতিদিনের সেই অদ্ভুদ জুস
তো আসেই ! আমি বেশ ভাল আছি ! মাঝে
মাঝে মনে হয় এমন একটা লক্ষ্যি বউ যদি
আমার থাকতো তাহলে কতই না ভাল হত !
আমি কেবল এই কথাটা চিন্তা করেছি
ঠিক সেদিনই ও কথাটা আমাকে বলল !
সাথে অনেক টাই দুঃখ করলো । যদি সে
বেঁচে থাকতো তাহলে নিশ্চই আমার বউ
হত ! এমন সময় ও আমাকে অদ্ভুদ একটা
প্রস্তাব দিল । যা শুনে আমি খুব বেশি
অবাক হয়ে গেলাম ! কেবল অবাকই না
বিশ্মিত হয়ে বললাম
-এটা কি সম্ভব ?
-হুম ! যদি তুমি চাও ? আসলেই চাও কি না
সেটাই হল ব্যাপার !
আমি কেবল বললাম
-চাই ! অবশ্যই চাই !
আমার কেন জানি মনে হল নীলি আমার
কথা শুনে খুব বেশি খুশি হল । একটু যেন
বেশিই খুশি !
প্রস্তাব টা এরকম যে ওর পক্ষে তো
আমার পৃথিবীতে আগের মত আসা সম্ভব
নয় কিন্তু আমার পক্ষে নাকি ওর
পৃথিবীতে যাওয়া সম্ভব এবং ওর মত করে
তবে সাময়িক সময়ের জন্য ! আমি
কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না কিভাবে
কাজ টা করবো ! ও কেবল আমাকে
বুঝিলে দিল ওর আর আমার ভিতরে
পার্থক্য হচ্ছে আমার শরীরটা ! এখন
কাজটা হবে আমার আত্মাটাকে আমার
শরীর থেকে আলাদা করার ! যদি
আলাদা করতে পারি তাহলেই নাকি
সম্ভব !
নীলি আমাকে যা বলল তার অর্থ হচ্ছে
মানুষের আত্মাটা শরীরের সাথে আটকে
থাকে কেবল মাত্র মনের জোরের
কারনে ! মন নাকি অবচেতন ভাবেই জোর
খাটিয়ে নিজেক শরীরের ভেতরে আটকে
থাকে । এখন আমার মনের উপর জোর
সৃষ্টি করতে হবে যাতে করে আমি যেন
আমার আত্মাকে বের করতে হবে । শরীর
থেকে আত্মা আলাদা হয়ে যাবে !
প্রতিদিন ঘুমানোর আগে খুব করে চেষ্টা
করতে লাগলাম !
কিন্তু কোথায় কি !
এভাবে সপ্তাহ খানেক চেষ্টা করেও যখন
কোন লাভ হচ্ছিল না তখন এদিন নীলিকে
চোখের পানি আটকে আমার তাকিয়ে
থাকতে দেখলাম ! অনেক কষ্টে সে
আমাকে কেবল বলল
-বেঁচে থাকতে তার কোন ইচ্ছে পূরন হয় নি
মরে গিয়েও হবে না !
কেন জানি ওর কান্না মিশ্রিত চেহারা
সহ্য হল না ! নিজের উপর খুব রাগ হল !
ঠিক ঐ দিনই কিছু একটা হল ! ঠিক রাত
তিন টার দিকে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল !
আমি ঘুম থেকে উঠেই দেখি চারিপাশে
কেমন আবছায়া আলোর মত কিছু একটা
খেলা করছে । কিন্তু আমি যতদুর খেয়াল
ছিল আমার ঘরটাতে কোন সময়ে
পুরোপরি অন্ধকার হয় না !
আসেপাশের ঘরের আলো এসে ঘরে একটা
আলো থাকে সারা রাত ।
আলোটা কেমন অপরিচিত মনে হল ! অন্তত
আমার জীবদ্দশায় এমন আলো আমি কোন
দিন দেখি নি ! এই আলোর ব্যাখ্যা কোন
ভাবেই দেওয়া সম্ভব নয় ! তবে আস্তে
আস্তে আমি টের পেলাম জায়গা টা
আসলেই আমার শোবার ঘরই । এই অদ্ভুদ
আলোর কারনে অন্য রকম লাগছে ।
নিজের ঘরের আসবার পত্র জানালা
দরজা সবই চিন্তে পারলাম একটু পরে !
আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে একটু নড়তেই
কেমন যেন নিজেকে খুব বেশি হালকা
মনে হল ! নিচে তাকিয়ে আমার চোখ
আকাশে উঠলো ! ঠিক নীচে কেউ শুয়ে
আছে । দেখতে হুবাহু আমার মত । এমন কি
আমি রাতের বেলা যেটা পড়ে ঘুমিয়ে
ছিলাম সে সেই পোষাকটাই পরে আছে ।
আমি কিছুটা অবিশ্বাস চোখ নিয়ে
তাকিয়ে রইলাম সেদিকে ।
তাহলে ?
তাহলে সত্যি ! কাজ হয়েছে ?
এবার নীলির কাছে যাওয়া যাবে ?
নীলির দেশে আমি প্রবেশ করতে
পারবো ?
সত্যি কি পারবো !
আমি যেই না আরেকটু নড়তে যাবো তখনই
দেখলাম একটা কিছু দড়ি জাতীয় জিনিস
দিয়ে আমার ঠিক পায়ের কাছ থেকে
আটকানো । এবং সেটা আমার ঘুমন্ত
শরীরের পায়ের কাছে আটকানো ! অনেক
টা শেকলের মত । ওটা দিয়ে আমি আমার
দেহের সাথে আটকে আছি !
আমি কিছু সময় টানাটানি করলাম কিন্তু
কোন লাভ হল না । সেটা খুলল না কিংবা
খোলার কোন লক্ষণও দেখলাম না ! ঠিক
সেই সময়ে নীলিকে দেখতে পেলাম । ওর
হাতে সাদা ফলাওয়ালা একটা কুঠার
জাতীয় কিছু ! আমার দিকে তাকিয়ে
হাসলো ! তবে ওর হাসির ভিতরে কেন
জানি কোন প্রাণ দেখতে পেলাম না ।
বরং সেখানে কেমন যেন একটা
তাড়াহুড়া ভাব ! নীলি বলল
-এটা কেটে ফেলতে হবে !
-কোন ক্ষতি হবে না তো !
-আরে না ! কোন সমস্যা নেই ! আমার
কথার উপর ভরশা নেই !
আমার অবশ্য আরও একটু চিন্তা ভাবনা
করার ইচ্ছে ছিল ! এভবে কেটে ফেলা
কি ঠিক হবে ? আমার কেন জানি মনে
হচ্ছে এটা আমার শরীরের সাথে আমার
আত্মার বন্ধন । কেবল মন না এটাই হচ্ছে
প্রধান যেটা আমাকে আমার শরীরের
সাথে আটকে রেখেছে । এখন এটা যদি
ছিড়ে ফেলি তখন ?
আমি আবার ফিরে যেতে পারবো তো
আমার শরীরে ?
নীলি যখনই আমার ঘুমন্ত শরীরের দিকে
এগিয়ে গেল তখনই একটা কাজ হল ! আমার
শোবার ঘরের দরজা হাট করে খুলে গেল ।
দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি সেখানে
বাড়িওয়ালা দাড়িয়ে আছে সাথে
আরেক জন ! তাকে চিনতেও আমার খুব
বেশি কষ্ট হল না । আমাদের এলাকার
মসজিদের ইমাম ! দরজা খুলে কেউ আমার
দিকে তাকালো না । এমন একটা ভাব
যেন আমাকে তারা দেখতেই পাচ্ছে না !
তাদের চোখ আমার ঘুমন্ত শরীরের
দিকে !
বাড়িওয়ালা খুব উত্তেজিত হয়ে কিছু
একটা বলল । কিন্তু আমি আবছা ভাবে
শুনতে পেলাম । মনে হল যেন অনেক দুর
থেকে শুনতে পাচ্ছি !
কেবল একটা কথাই কানে গেল !
বাড়িওয়ালা বলছে
দেরি হয়ে গেল নাকি ?
হুজুর বলল
-না মনে হয় ! এখনও শরীর গরম !
তারপর হুজুর আমার শরীরের দিকে
এগিয়ে এসে হাত স্পর্শ করলো । সঙ্গে
সঙ্গে আমার পুরো শরীর কেঁপে উঠলো !
নীলির দিকে তাকিয়ে দেখি ওর মুখ টা
কেমব বিষন্ন হয়ে গেছে । তারপর হুজুর
পানি জাতীয় ছিটালো আমার উপর ।
আমার আর কিছু মনে নেই !
সকালে বেশ বেলা করে ঘুম থেকে
উঠলাম । তাকিয়ে দেখি বাড়িওয়ালা
আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমার
চোখ খোলাতে তার মুখে একটা
দুঃচিন্তার একটা রেখা একটু কমে গেল !
আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না কি হল ।
আর বাড়িওয়ালা আমার ঘরে কি করছে ।
রাতের ঘটনা গুলো কেমন আবছা আবছা
মনে আছে ।
একটু পরে পাড়ার মসজিদের ইমাম এসে
আমাকে দেখলেন । আমাকে গত রাতের
ঘটনা বললেন ! আমি নাকি রাতে বেশ
চিৎকার চেঁচামিচি করেছিলাম । সেই
শুনেই বাড়িওয়ালার আমার দরজার
সামনে এসেছিলেন । তিনি আগে থেকে
আঁচ করেছিলেন যে কিছু একটা হয়েছে
আমার । সোজা গিয়ে ইমাম সাহেব কে
ডেকে আনেন !
ইমাম সাহেব জানতে চাইলো
-ঐ মেয়েটার সাথে কত দিন কথা বল ?
-এই মাস খানেকের উপরে !
-ও কি তোমাকে কিছু খেতে দিতো ?
মানে সাথে করে নিয়ে আসতো !
-হুম !
-ওটা দিয়েই তোমাকে বস করেছে ।
তোমার চিন্তা ভাবনা টাকে বসে
এনেছে । যাই হোক এখন অনেক টা ভাল
আছে । সময় মত না এলে অনেক ক্ষতি হয়ে
যেত । তুমি হয়তো আর বেঁচে থাকতে না !
এখানে আর থেকো না ।
ঐ দিনই বাসা ছেলে দিলাম । জিনিস
পত্র আপাতত থাকুক আমি কেবল একটা
ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম এক বন্ধুর
বাসায় গিয়ে থাকি অন্য বাসা না খুজে
পাওয়ার আগ পর্যন্ত !
সিএনজিতে হঠাৎ কি মনে হতে ব্যাগ টা
খুলতেই দেখলাম আমার জামা কাপড়ের
ভিতরে এক টুকরো কাগজ ! সেখানে
কেবল একটা লাইণ লেখা "তোমাকে
কাছে পেতে চেয়েছিলাম, হয়তো একটু
অন্যায় পথে, এইটাই কেবল আমার অপরাধ
ছিল"
আর কিছু লেখা নেই ! আমি কাজটা দুমড়ে
ছুড়ে দিলাম বাইরে ! পেত্নীর ভালবাসা
পাওয়া থেকে বেঁচে থাকাটা আমার
কাছে বেশি আনন্দের মনে হল !
রেসিপি দেখুন
No comments :

No comments :

Post a Comment