বাংলাদেশের কিছু ভৌতিক ঘটনা

১।গানস অফ বরিশালঃ গুগলে লিখে সার্চ দিলেই পাবেন । ব্রিটিশরা বরিশালে আসার সময় নাম ছিল বাকেরগঞ্জ ।বাকেরগঞ্জের ততকালীন ব্রিটিশ সিভিল সার্জন প্রথম ঘটনাটা লেখেন ।বর্ষা আসার আগে আগে গভীর সাগরের দিক থেকে রহস্যময় কামান দাগার আওয়াজ আসতো ।ব্রিটিশরা সাগরে জলদস্যু ভেবে খোজাখুজি করেও রহস্যভেদ করতে পারে নাই ।

২।বগা লেকঃ কেওকারাডং এর আগে রুপসী বগা লেক ।বম ভাষায় বগা মানে ড্রাগন ।বমদের রুপকথা অনুযায়ী অনেক আগে এই পাহাড়ে এক ড্রাগন বাস করতো ।ছোট ছোট বাচ্চাদের ধরে খেয়ে ফেলতো । গ্রামের লোকেরা ড্রাগনকে হত্যা করলে তার মুখ থেকে আগুন আর প্রচন্ড শব্দ হয়ে পাহাড় বিস্ফোরিত হয় ।রুপকথার ধরন শুনে মনে হয়,এটা একটা আগ্নেয়গীরির অগ্ন্যুতপাত ।উপজেলা পরিষদের লাগানো সাইনবোর্ডে সরকারী ভাবে এই রহস্যের কথা লেখা ।এখনো এর গভীরতা কেউ বলতে পারে না । ইকো মিটারে ১৫০+ পাওয়া গেছে ।প্রতিবছর রহস্যময় ভাবে বগা লেকের পানির রঙ কয়েকবার পালটে যায় ।যদিও কোন ঝর্না নেই তবুও লেকের পানি চেঞ্জ হলে আশপাশের লেকের পানিও চেঞ্জ হয় । হয়তো আন্ডার গ্রাউন্ড রিভার থাকতে পারে ।রহস্য ভেদ হয়নি এখনো।

৩।চিকনকালা (নিফিউ পাড়া): মুরং গ্রামটা বাংলাদেশ-বার্মা নো ম্যানস ল্যান্ডে ।আমি এখানে মৃত চিতাবাঘের ছাল দেখেছি ।দুপুর ১২টায় বুনো দাঁতালো শুকর,ময়ুর দেখেছি ।দিনের বেলাতেই বার্কিং ডিয়ার আর ভাল্লুকের ডাক শুনেছি ।কাছের মুরং গ্রাম চিকনকালার লোকেরা বলে প্রতিবছর নাকি (দিনটা নির্দিষ্ট না) হঠাত কোন জানান না দিয়ে বনের ভিতর রহস্যময় ধুপ ধাপ আওয়াজ আসে । শিকারীরা আওয়াজটা শুনলেই সবাই দৌড়ে বন থেকে পালিয়ে আসে ।কিন্তু প্রতিবছরেই কয়েকজন পিছে পড়ে যায় । যারা পিছে পড়ে তারা আর ফিরে আসে না । কয়েকদিন পরে বনে তাদের মৃতদেহ পাওয়া যায় ।শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই ।শুধু চেহারায় ভয়ঙ্কর আতঙ্কের ছাপ ।

৪।।সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড: মেঘনা নদী যেখানে সাগরে মিশেছে যায়গাটাকে বলে সোয়ার্জ অফ নো গ্রাউন্ড বা অতলস্পর্ষী ।গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ গঠনের পর থেকেই দু'মুখী স্রোতের ঠেলায় তলার মাটি সরে যাচ্ছে । এখানে গভীরতা পরিমাপ করা যায়নি ।

৫।। চুয়াডাঙ্গার আলিয়াপুর নামক গ্রামে নাকি প্রতি আমাবস্যায় রাত ১২টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত একদল কুকুর দলবেঁধে গ্রামটি ঘিরে চক্কর দেয় ।অনেকেই সেই কুকুরের দলকে দেখতে পেয়েছেন । আশ্চর্যের ব্যাপার হলো,তারা শুধুমাত্র আমাবস্যার রাতেই উপস্থিত হয় এবং সারা মাসে তাদের আর দেখা যায় না । কয়েক যুবক মিলে একবার রাত করে তাদের দেখার জন্য প্রস্তুতি নেয় ।তাদের মাঝে ২ জন কুকুরের কামড়ে মারাত্মক ভাবে আহত হয় ।যুবকদের প্রায় সকলেই একই স্বীকার উক্তি দেয় যে,সেই সব কুকুরগুলো কালচে বর্ণের ছিলো,কারন অন্ধকারে তাদের স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না । তারা একটা ছন্দ মিলিয়ে এক লাইনে হাঁটছিলো এবং তাদের প্রত্যেকের চোখ থেকেই এক প্রকার নীলচে আভা বের হচ্ছিল ।

৬।। লালবাগ কেল্লার নিচ দিয়ে অনেক গুলো সুড়ঙ্গ আছে,যেগুলো জমিদার আমলে করা ।জমিদাররা বিপদ দেখলে সেইসব পথে পালিয়ে যেতো ।তেমনই একটা সুড়ঙ্গ আছে,যার ভেতরে কেউ ঢুকলে তাকে আর ফিরে পাওয়া যায় না । মানে,সে আর ফিরে আসে না ।পরীক্ষা করার জন্য একবার ২টা কুকুরকে চেইনে বেঁধে সেই সুড়ঙ্গে নামানো হয়েছিলো ।চেইন ফেরত আসে কিন্তু কুকুর দুটো ফিরে আসে নি । ব্যাখ্যাঃ সুবেদার আজম শাহ ১৬৭৮ সালে ঢাকায় একটি প্রাসাদ দুর্গ নির্মাণে হাত দেন ।তখন ঢাকার সুবেদারদের থাকার জন্য স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা ছিল না ।স্বল্প সময়ের জন্য দায়িত্ব পালন করতে আসা সুবেদাররা ঢাকায় স্থায়ী ভবন নির্মাণে কোনো উৎসাহ দেখাননি ।যুবরাজ আযম শাহ প্রথম এই উদ্যোগ নেন । তিনি অত্যন্ত জটিল একটি নকশা অনুসরণ করে দুর্গের নির্মাণকাজ শুরু করেন । তিনি দুর্গের নামকরণ করেন কিল্লা আওরঙ্গবাদ ।কিন্তু পরের বছর সম্রাট আওরঙ্গজেব তাঁকে দিলি্ল ফেরত পাঠান ।ফলে দুর্গের কাজ অসমাপ্ত রেখে তাঁকে দিল্লি চলে যেতে হয় ।এরপর সুবেদার হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ঢাকা আসেন শায়েস্তা খাঁ ।যুবরাজ আযম শাহ তাঁকে লালবাগ দুর্গের অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্য অনুরোধ করেন । শায়েস্তা খাঁ দুর্গের কাজ পুনরায় শুরু করেন । কিন্তু ১৬৮৪ সালে তাঁর অতি আদরের মেয়ে পরি বিবি অকস্মাৎ মারা গেলে তিনি অশুভ মনে করে এর নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন ।এর পরিবর্তে নির্মাণ করেন চিন্তাকর্ষক পরি বিবির সমাধিসৌধ ।কিন্তু এ সময়ের মধ্যে লালবাগ দুর্গের প্রায় ১২ শতাংশ নির্মাণকাজ শেষ হয়ে এসেছিল ।দুর্গের নিয়ম অনুযায়ী একটি ভূগর্ভস্থ পথও নির্মিত হয়েছিল । আত্মরক্ষা কিংবা প্রয়োজনে পালিয়ে যাওয়ার জন্য সাধারণত এ পথ ব্যবহৃত হয় ।দুর্গের দক্ষিণ-পূর্ব দেয়ালের সঙ্গে যুক্ত আছে এ সুড়ঙ্গ পথটি । কোনো কোনো স্থাপত্যিকের ধারণা,এ পথটি প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে টঙ্গী নদীর সঙ্গে যুক্ত। আবার কেউ মনে করে,এটি একটি জলাধারের মুখ ।এর ভেতরে একটি বড় চৌবাচ্চা আছে । মোগলদের পতনের পর লালবাগ দুর্গ যখন সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায়,তখন ঢাকাবাসীর সব আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় এই সুড়ঙ্গ ।আর তখন থেকেই নানা মুখরোচক কাহিনী চালু হয় সুড়ঙ্গটি নিয়ে ।যেহেতু সুড়ঙ্গ পথের রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য আজ পর্যন্ত প্রত্নতাত্তিক খননকাজ হয়নি,তাই এটি নিয়ে নানা কল্পকাহিনী চালু আছে ।এ কারণেই এ সুড়ঙ্গ পথটি ঢাকার আদি বাসিন্দাদের কাছে এক বিরাট রহস্য । তাই আজও এই সুড়ঙ্গের সামনে তারা জড়ো হয়ে দাঁড়ায় ।জানমালের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় বা কৌতূহলবশত কেউ যেন এর ভেতরে প্রবেশ না করে সে জন্য সুড়ঙ্গমুখে গেট নির্মাণ করে তাতে তালা দেওয়া হয়েছে ।ঢাকাবাসীর মনে তালা দেওয়ার ব্যবস্থা কিন্তু আজও হয়নি ।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
sr7themes.eu.org