সাহসী বলতে ভূত

এখন যেই ঘটনাটি বলবো সেইটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় মর্মান্তিক সত্য ঘটনা। আজ থেকে পাঁচ বছর আগের ঘটনা । আমরা ৮জন বন্ধু মিলে এক জায়গায় ঘুরতে যাই ।আমাদের বন্ধুদের মধ্যে তিনজন ছাড়া আমরা বাকি পাঁচজন খুব সাহসী ছিলাম ।

সাহসী বলতে ভূত পেত্নী এসব পাত্তাই দিতাম না । আমরা বলতাম যেগুলো চোখে দেখি নাই সেগুলো কিভাবে বিশ্বাস করবো তাই আমরা পাত্তা দিতাম না । আমরা যেখানে ঘুরতে গেছিলাম সেখানকার কিছু দূরে একটা মাটির রাস্তা ছিল । সেই রাস্তার পাশে একটা খুব সুন্দর বটগাছ ছিল । আমরা বন্ধুরা সবাই বটগাছের নীচে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম তখন রাত দুইটা । হঠাত লক্ষ্য করলাম পাশে একটা শশ্মান । রীতিমত দুইজন বন্ধু চেঁচামেচি শুরু করে দিলো চলে যাওয়ার জন্য কিন্তু আমরা গেলাম না । ঠিক তার কিছুক্ষন পর দূরে বিলের মাঝ থেকে একটা টর্চ এর আলো চোখে এসে পড়ল । সেই আলো আবিষ্কার করতে যেয়ে দেখলাম একটা ঘর কিন্তু আশেপাশে আর কিছুই নেই । ওখানে একদম নির্জন ঘরটা দেখে আমাদের মনে কৌতূহল জাগল কিন্তু তিনজন বন্ধু যেতে রাজী না তাই তাদের রুমে চলে যেতে বললাম ।তারা একা যেতে ভয়  পাচ্ছে তাই বাধ্য হয়ে আমাদের সাথেই গেল । ঘরের কাছে গিয়ে দেখি একজন মানুষ বসে ঘুমাচ্ছে হাতে টর্চ নিয়ে । আমাদের কথায় তার ঘুম ভেঙ্গে গেল । সেকি বেহাল দশা তার,ড্রিংক্স করে পুরাই লোড । আমাদের দেখে ধমক দিয়ে জিজ্ঞাসা করল কে তোমরা ? কি চাও ? আমরা বললাম এখানে ঘুরতে আসছিলাম আড্ডা দিচ্ছিলাম । ঘরটা দেখে কি আছে দেখতে আসলাম । লোকটা হাসি দিয়ে বলল পাগল ছেলেরা এখানে দেখার কিছু নাই চলে যাও নয়তো বিপদে পড়বে । আমি বললাম কিসের বিপদ ! আর এই ঘরটা কিসের কে থাকে ? সে এবার ধমক দিয়ে বলল চলে যাও এখানে লাশে থাকে,এটা একটা লাশ ঘর ।এই কথা শুনে আমরা ফেরত আসতে লাগলাম । একটু আগাতেই তুহিন বলল চল লাশঘরের ভেতর যেয়ে ঘুরে আসি ।অন্য একজন বন্ধু তানিম সে বলল চল ঘুম পাচ্ছে রুমে চল ।তুহিন আর তানিম খুব সাহসী ছেলে । এদের সাহস পরিমাপ করার মত না । তানিমের কথা শুনে তুহিন বলল রুমে যেতে বলছিস কেন ভয় পেলি নাকি ? তানিম বলল আমি ভয় পাইনা,চাইলে একাই লাশ ঘর থেকে ঘুরে আসতে পারি ।তখন তুহিন বলল ঠিক আছে হয়ে যাক বাজি ৫০০০ টাকার । দুইজনই রাজী হয়ে গেল বাজিতে ।বাজিটা ছিল আগামীকাল ঠিক রাত তিনটার সময় তানিম এক প্যাকেট পায়েস নিয়ে ঐ লাশ ঘরে যাবে এবং সব লাশের হাতে এক চামচ পায়েস দিবে ।আগামীকাল রাতে তুহিনকে আমরা পাইনা । না পেয়ে মোবাইলে কল দিই ।তুহিন বলল সে একটু কাজে গেছে,কাল সকালে আসবে । আর এদিকে ঠিক তিনটায় তানিম পায়েস নিয়ে লাশ ঘরে যায় ।সব লাশের হাতে এক চামচ
করে পায়েস দেয় ।সবার শেষের লাশটির হাতে যখন পায়েস দেয় তখন লাশটি পায়েস খেয়ে ফেলে এবং হাতের ইশারায় তানিমের
কাছে পায়েস চায় ।তানিম পায়েস দেয়
এভাবে লাশ পায়েস চায় আর তানিম
দিতে থাকে ।একপর্যায়ে পায়েস শেষ হয়ে যায়
।তানিম আর পায়েস দিতে পারেনা ।পায়েস
না দেওয়াই লাশটি গোঙ্গানির মত শব্দ
করে ।শুয়ে থেকে লাশটি এবার উঠে বসে আর
তানিম তা দেখে দৌড় দিচ্ছে এমন
সময়ে পেছন থেকে লাশটি তানিমের হাত
ধরে ফেলে আর তানিম সাথে সাথে বেহুশ
হয়ে পড়ে যায় ।তুহিন আমাদের কল
দিয়ে তানিমের বেহুশ হবার খবর
দিলে আমরা সবাই
তানিমকে নিয়ে মেডিকেলে যাই ।
সেখানে তানিমের চিকিত্সা হয় ।
আমরা তুহিনকে কি হয়ছে জিজ্ঞাসা করলে তুহিন
বলে তানিম লাশের হাতে পায়েস
দিছে কিনা দেখার জন্য তুহিন লাশ
ঘরে আসে এবং তানিমকে বেঁহুশ অবস্থায়
দেখে ।তানিমের হুঁশ
ফিরলে আমরা জানতে চাইলাম সেই
রাতে কি হইছিল ? তানিম সবকিছু বলল
এবং তা শুনে আমাদের শরীর শিউরে উঠল ।
তানিম বাজি জিতে গেল এবং তুহিনও
টাকা দিল ।
আপনাদের মনে হয়ত প্রশ্ন জাগছে যে লাশ
কিভাবে পায়েস খেলো ! লাশ জীবিত হলোই
বা কি করে ।আপনাদের আগেই বলেছিলাম
যে তুহিন আর তানিমের সাহস পরিমাপ করার
মত না ।ঠিক একই প্রশ্ন আমাদের মনেও
জাগলো আমরাও বুঝলাম না কিন্তু
পরে উদঘাটন করতে পারলাম লাশটা তুহিনের ছিল ॥

(সংগৃহীত)
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
sr7themes.eu.org