ভুুতের গল্প ২৩ চট্রগ্রামের দেওয়ানহাটের ভুত
আমি তখন এতোটা ছোট না যে কিছু
বুঝিনা, আবার এতোটা বড় না যে সব
কিছু বুঝে একাকার করে ফেলেছি।
পড়তাম ক্লাস ফোর কি ফাইভ।
থাকতাম চট্টগ্রামের দেওয়ানহাটে।
আমাদের বাসা ছিল পাঁচতলা, খুব
ছোটবেলা থেকেই ঐখানে থাকতাম
আমরা। দেওয়ান হাট
যে জায়গাটিতে আমরা থাকতাম, ওই
এলাকাটাতে অনেক
আগে একটা বিশাল দীঘি ছিল
বলে লোকমুখে শুনেছি। চট্টগ্রামের
মানুষরা অনেকেই এই
কথা জেনে থাকবেন।
তবে সেটা কোন সমস্যা ছিল না, ওই
এলাকাটা প্রচুর ঘনবসতি পূর্ণ এলাকা।
এবার মূল ঘটনায় আসিঃ
আমাদের ছিল দুই বেডের বাসা, এক
বেড আব্বু আম্মু আর
আরেকটাতে থাকতো আমার আপু আর
আমার ছোট খালা। আমি ছিলাম
পরিবারে সবচাইতে ছোট মানুষ, তাই
আমাকে থাকতে হতো ড্রয়িং রুমে ডিভার্ন
এ বিছানা করে। একরাত্রে গরমকাল,
আমি জানালা খুলে ঘুমাচ্ছি। আমার
রূমে ছিল একটা ডিম লাইট, নীল রঙ এর।
হঠাৎ রাত দুইটা কি তিনটা এমন
সময়ে ঘুম ভেঙ্গে যায়, সময়ের
ব্যাপারটা আমার কাছে তখন সেই
অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ছিলনা তাই খেয়াল
করে রাখিনি। আমার ঘুম
থেকে উঠে দেখলাম সোফার
উপরে একজন মহিলা শুয়ে আছে, চুল
আঁচড়াচ্ছে। মহিলাটার
বর্ণনা মোটামুটি এরকম, চেহার স্পষ্ট
নয়, (অবশ্য আমি অতোটা খেয়াল
করে দেখেছিলাম তাও নয়)। চুল
গুলো লম্বা। আঁচড়ানোর
সময়ে চুলটা সোফা থেকে নীচ পর্যন্ত
গিয়ে ঠেকেছিল (আমাদের
সোফাটা বসার স্থান
ভূমি থেকে প্রায় দেড় ফুট উপরে হবে)।
শুয়ে ছিল সোজা হয়ে, একপাশে চুল
ছড়ানো (বাইরের
পাশে যেপাশে বসলে পা থাকে)।
ফ্যানের বাতাসে কিছু চুল
বাতাসেও উড়ছে। পরনে নীল রঙ এর
শাড়ি( হয়তো সেটা নীল দেখাচ্ছিল
ডিম লাইটের আলোতেই)। আমি এসব
ব্যাপার লক্ষ করলাম, লক্ষ করলাম
বলতে এটা এমনিতেই
নজরে চলে আসে।
আমি ব্যাপারটা নিয়ে কোন প্রকার
বিচলিত হই নি ওই মূহুর্তে কারন ঠিক
সেই মূহুর্তে আমার মনে হয়েছিল
এটা আমার খালামনি, রাতের
বেলায় হয়তো ঘুম আসছেনা, তাই
আমার রূমে এসে শুয়ে আছে। আমার
একটা অভ্যাস/ বদ অভ্যাস যা বোধহয়
অনেকেরি আছে, সেটা হল
রাত্রে ঘুম
ভাঙ্গলে আমি ওয়াশরুমে গিয়ে হালকা ফ্রেশ
হয়ে আসতাম। তো আমি মহিলার
দিকে নজর নজর না দিয়ে আমার কাজ
আমি করে ফ্রীজ
থেকে ঠান্ডা পানি বের
করে খেয়ে সেই
বতলটা আলসেমী করে ফ্রীজে না রেখে রেখেছিলাম
ফ্রীজের পাশে টেবিলে।
পানি খেয়ে আমি আমার
রূমে ঘুমাতে চলে এসেছি, তখনো ওই
জিনিসটা চুল আঁচড়াচ্ছিল। আমার
মাথায় তখন কিছুই খেলা করেনি,
আমি শুধু ওইটাকে আমার
খালামনি ভেবে খুব স্বাভাবিক
চিন্তাভাবনাই করছিলাম।
রূমে ঢুকে খুব স্বাভাবিকভাবেই ( তার
দিকে ভাল করে না তাকিয়ে)
জিজ্ঞেস
করলামঃ আপনি এখানে কি করেন?
উনিও খুব
স্বাভাবিকভাবে তবে অনেক ক্ষীন
কন্ঠে (যেটা আমার খালার কন্ঠ না)
বললেনঃ কিছুনা, এমনি শুয়ে আছি।
আমি কন্ঠের
ব্যাপারটা পাত্তা দিলাম না, কারন
তখন ও আমার প্রচন্ড ধুম পাচ্ছিল।
আমি ঘুমাতে গেলাম।
খুব ভোরে আমার ঘুম ভাংল সেদিন।
এবং সাথে সাথেই মাথার
মাঝে ঝড়ের বেগে কিছু ব্যাপার
খেলে গেল। সেগুলো বলার
আগে পাঠকদের কিছু
কথা জানা প্রয়োজন।
তা হলঃ আমাদের বাসার
চারিপাশে ছিল অনেক লোহার
কারখানা, তাই খুব সকাল সকাল
সেখানে কাজ শুরু হয়ে যেতো আর
আমার রূম টা বারান্দার
সাথে থাকাতে সকালে এই
আওয়াজে ঘুমাতে পারতাম না। তাই
আমি আমার রূমের দরজা ভীতর
থেকে বন্ধ করে ঘুমাতাম।
যেটা সেদিন ও করেছিলাম।
এবং ঠিক তখনি মনে পড়ল
যে আমি আমার রূমের দরজা খুলেই
রাত্রে ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম
এবং এসে ঘুমানোর আগে সেই
দরজা বন্ধ করেই ঘুমিয়েছিলাম।কিন্তু
এই ব্যাপারগুলা ওই সময়ে আমার
মাথায় কিছুই আসেনি।
আমি সাথে সাথে সোফার
দিকে তাকালাম, কেউ নেই।
সাথে সাথে উঠলাম, দরয়াজ বন্ধ করাই
আছে। ভাবলাম
রাত্রে আমি হয়তো স্বপ্ন দেখেছি।
তখন ও আমার ঘরের কেউ ঘুম
থেকে উঠেনি।
আমি তাড়াতাড়ি স্বপ্নের
ব্যাপারটা নিশ্চিৎ হওয়ার জন্য
ফ্রীজের কাছে গেলাম, পানির
বোতলটার কথা খেয়াল ছিল।
বোতলটা সেখানে সেই অবস্থাতেই
ছিল রাত্রে যেই অবস্থায়
আমি পানি খেয়ে রেখেছিলাম।
আম্মুকে ডেকে তুললাম ভয়ে, চিৎকার
শুনে খালাও উঠে গেল।
আম্মুকে ঘটনা বলছিলাম আর
খালা আমার সামনে এলো, তখন
মনে পড়ল, আমার খালামনির চুল ঘাড়
পর্যন্ত, সেটা কখনোই সোফার উপর
থেকে এতোনীচে যাবেনা।
আমি আরো বেশি ভয় পেয়ে গেলাম।
আম্মু আমার
পুরা কথা শূনে দৌড়ে আমার
রূমে গেল। সোফার
পাশে পড়ে থাকতে দেখল একটা খুব
স্বাধারন চিরুনী, যেটা আমাদের
ঘরের নয়। ঘরের দরজা জানালা সব ই
পরখ করে দেখল, সব ই স্বাভাবিক, ভীতর
থেকেই আটকানো......
দিনটি (রাত্রিটি) ছিল সোমবার।
দিনটির কথা বললাম কারন ঠিক এই
দিনেই আমার জীবনে সেই রূমেই
আরো অনেক
ঘটনা ঘটেছে যা আমি ভবিষ্যতে শেয়ার
করবো সময় পেলে।