ভুতের গল্প ২০ লাকসাম শহরের ভুত
এটি সম্পূর্ণ সত্য
একটি ঘটনা, এবং আমি হুবুহু আমার
ভাষায় তুলে ধরলাম ।
ব্যাপারটা যতটা ন ভৌতিক
তারচেয়ে বেশি রহস্যময় ।
আমি নদী । গ্রামের
বাড়ি কুমিল্লার লাকসামে।
ছোটবেলা থেকেই ঢাকায় থাকি ।
গ্রামে খুব একটা যাওয়া হয় না ।
বাবা অনেক জোর করে ৩ বছর
আগে একবার
ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন
গ্রামের বাড়িতে ।
ঢাকা থেকে লাকসাম কিন্তু
বেশি দূরে না, অথচ পড়ালেখা আর
ক্লাসের ঝামেলার কারণে এই অল্প
দূরত্বই অনেক বেশি হয়ে দাঁড়ায়
মাঝে মাঝে । যাই হোক, সেবার
গ্রীষ্মের ছুটিতে বাবা, মা,
আমি আর আমার ছোট ভাই জয়
মিলে দাদা বাড়ির
উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম ।
বাবা গাড়ি চালাচ্ছিলেন ।
কুমিল্লায় আমরা যখন পৌঁছাই তখন
বেলা প্রায় শেষের দিকে ।
রাস্তায়
গাড়ি থামিয়ে আমি আর আম্মু
পাশের
দোকান থেকে চা বিস্কিট
কিনে খেতে লাগলাম আর
বাবা গেলো নামাজ পড়তে ।
আমরা গাড়িতে বসে চা খাচ্ছি,
এমন
সময় এক বুড়ো মতন লোক হটাত
কোত্থেকে যেন উদয় হলো । গাড়ির
পিছনের সিটে ছিলাম আমরা ।
সামনের সিটে জয় ঘুমুচ্ছে ।
লোকটা এসে দাঁড়িয়ে আমাদের
দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো ।
চাহনি দেখে কেমন
যেনো করে উঠলো বুকের ভেতর ।
শীতল চাহনি । অনেকটা মাছের
মতো । আম্মু কিছু বলতে চাচ্ছিল
কিন্তু
তার আগেই লোকটি বলে উঠলো,
অনেকদিন
পরে গ্রামে আসলি তোরা ।
অনেকদিন পরে আসলি ।
সাবধানে থাকবি । সন্ধ্যার পর
রাস্তা ভালো না । অনেক খারাপ
জিনিস ঘুরে । অনেক সাবধান ।
অনেক
সাবধান ।
আমি আর আম্মু দুজনেই
চা খাওয়া বাদ
দিয়ে হা করে তাকিয়ে রইলাম
লোকটার দিকে । আম্মুর
আগে আমিই
স্বাভাবিক হলাম । ঢাকা থাকার
সুবাদে এইসব বাটপার লোক অনেক
দেখেছি । কড়া গলায় বললাম, মাফ
করেন । লোকটি তাচ্ছিল্লের
হাসি দিয়ে বলল, আমি তোদের
কাছে কিছু চাইতে আসি নি রে,
তোদের সাবধান করতে এসেছি ।
তবে যাবার পথে পারলে পীরের
মাজারে কিছু সিন্নি দিয়ে যাস ।
তোদের ভালো হবে । এই
বলে লোকটা যেমন হটাত
এসেছিলো তেমনি দ্রুত
চলে গেলো ।
আম্মু
খানিকটা ঘাবড়ে গিয়ে বললেন,
কি বলল রে লোকটা ?
কথাবার্তা কেমন কেমন যেনো ।
আমি হেসে ব্যাপারটা নরমাল
করার
চেষ্টা করলাম । আম্মুকে বললাম,
বাবাকে কিছু বলো না । অনেকদিন
পর
এসেছি আমরা, বাবা এসব
শুনলে চিন্তায় পড়ে যাবে ।
যাই হোক, বাবাকে কিছু
জানানো হলো না । আমরা পুনরায়
যাত্রা করলাম গন্তব্যের দিকে ।
বাসা থেকে প্রায় ২০ মিনিটের
দূরত্বে আবারো থামতে হলো ।
মাগরিবের নামাজের সময় প্রায়
শেষের দিকে ।
বাবা মসজিদে চলে গেলেন ।
আমি আর
আম্মু গাড়িতে বসে রইলাম ।
দুপাশেই
সুন্দর ঢেউ খেলানো ধানের
সারি দেখা যাচ্ছে ।
মাঝে মাঝে দমকা বাতাস
উঠছে খেতের উপর । সুন্দর পরিবেশ ।
দেখলেই শান্তি লাগে ।
একমনে তাকিয়ে আছি, এমন সময়
হটাত
সামনে কিছু
একটা নড়ে উঠতে দেখলাম
। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে, আলোও প্রায়
নিভু নিভু । চোখে ভুল দেখলাম
নাকি বুঝতে পারলাম না । এবার
দৃষ্টি স্থির করে তাকিয়ে রইলাম ।
এবার স্পষ্ট দেখতে পেলাম সেটা ।
ধানের খেতের
মাঝখানে একটা ছেঁড়া কাপর চোপড়
পড়ান কাকতাড়ুয়া দাড়
করিয়ে রেখেছিলো কেউ । আমার
চোখের সামনে সেটি একটু
নড়ে উঠলো । শুধু নড়ে উঠলো না,
মনে হলো যেনো জায়গা পরিবর্তন
করলো । হতভম্ব হয়ে গেলাম আমি ।
মুখ
দিয়ে বিস্ময়ের একটা আওয়াজ
বেরিয়ে এলো। আম্মু লক্ষ
করলো ব্যাপারটা ।
আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলল,
কিরে কি হয়েছে ? আমি বললাম,
ঐখানে একটা কাকতাড়ুয়া দেখতে পাচ্ছো?
আম্মু চশমা চোখে লাগিয়ে বলল, হম
দেখতে পাচ্ছি । তো কি হয়েছে ?
আমি খানিকটা দ্বিধা মাখা কণ্ঠে বললাম,
সেই কাকতাড়ুয়াটা খানিক
আগে নড়েছে, হেঁটেছে, হেঁটে অন্য
জায়গায় গিয়েছে ! আম্মু
খানিকক্ষন
আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন,
তারপর
বললেন, তোকে এতবার নিষেধ
করেছি আমার সাথে ফাজলামু
করবি না, তারপরও ঠিক হলি না ?
আমি কিছুতেই
আম্মুকে বুঝাতে পারলাম
না ঘটনাটা ।
বাবা আসার পর আমরা পুনরায়
বাড়ির
পথে রওনা হলাম ।
বাড়ি থেকে খানিক
সামনে একটা বড়
পুকুরের মতো পড়ে । বাবার
কাছে শুনেছিলাম
পুকুরটা নাকি আমার বড়
দাদা অর্থাৎ
আমার বাবার
দাদা কাটিয়েছিলেন ।
বিশাল গভীর পুকুর ।
সামনে অনেকগুলো নারিকেল গাছ ।
পাকা রাস্তা । মানুষ
গাড়ি ঘোড়া কিছুই নেই । তাই
বাবা মোটামুটি স্পীডে গাড়ি চালাচ্ছিলেন
। সামনের সিটে জয় ঘুম
থেকে জেগে উঠে বসে আছে ।
গভীর মনোযোগে সামনের
দিকে তাকিয়ে আছে । হটাত
বাবা আঁতকে উঠলেন । ঠিক
সাথে সাথেই জয়ও চিৎকার
করে উঠলো । কিছু বুঝে উঠার আগেই
আমাদের
গাড়িটি গিয়ে বারি খেলো রাস্তার
পাশের একটা নারিকেল গাছের
সাথে ।
জয় তারস্বরে চিৎকার করছে ।
বাবা সাথে সাথে গাড়ির ভেতরের
লাইট জালিয়ে দিলেন দেখার জন্য
সব
ঠিক আছে কিনা ।
আম্মুকে দেখে বুঝতে পারলাম
অসম্ভব
ভয় পেয়েছে । বাবা দ্রুত
গাড়ি থেকে নেমে গেলেন ।
বাইরে গিয়ে রাস্তার
পাশে দাঁড়িয়ে কাকে যেনো খুঁজতে লাগলেন
।
আমি গাড়িতে থাকবো না নামবো ঠিক
করতে পারছিলাম না ।
অবশেষে নামার সিদ্ধান্ত নিলাম ।
বাবার পাশে চলে গেলাম,
গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
কি হয়েছে বাবা ?
গাড়ি ব্রেকে সমস্যা ?
বাবা আমার
দিকে তাকিয়ে খানিকটা বিভ্রান্তের
মতো বললেন, নারে মা ।
মনে হলো গাড়ির
সামনে দিয়ে একটা মানুষ দৌড়
মারল
। স্পষ্ট দেখলাম
গায়ে একটা ছেঁড়া কাপর পড়া ।
লোকটার
গায়ে ধাক্কা দিবো না বলে গাড়ির
নাক ঘুরিয়ে দিয়েছিলাম, কিন্তু
শেষ
রক্ষা হয় নি । লোকটা মনে হয়
বারি খেয়েছে গাড়ির সাথে ।
আমি, বাবা, আম্মু সবাই
মিলে অনেক্ষন
খুঁজলাম গাড়ির আসে পাশে।
শেষে বাবা বলল
বাড়িতে যাওয়া যাক । সেখান
থেকে লোক
নিয়ে এসে খোঁজা যাবে । সবাই
একমত
হলাম ।
বাসায় গিয়ে পৌঁছে যা শুনলাম
তাতে আক্কেল গুড়ুম হয়ে গেলো ।
পুকুরের পাড়ে নাকি আজকাল
অনেকেই এমন ঘটনার সম্মুখীন হয় ।
অনেকেই নাকি ছেঁড়া কাপড় চোপড়
পড়া একটা মানুষ আকৃতির
মূর্তিতে দেখে । কিন্তু গাড়ি,
রিক্সা, বা মোটর সাইকেল
থেকে নামার পর আর
কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না ।
যদিও
কেউ এখনো পর্যন্ত ক্ষতির
সম্মুখীন হয় নি,
তবে রাতে রাস্তা ঘাঁটে মানুষ
চলাচল
অনেক কমে গেছে ।