ভুতের গল্প ৩৬ ব্রাডলাফ
গল্পের নায়ক চার্লস ডি. ব্রাডলাফ
নামের এক তরুন ।
ভূত, প্রেতাত্মা এসবের প্রতি মোটেই
বিশ্বাস নেই । শুধু তাই না... এ
সম্পর্কে যেকোনো কাহিনী ভাঁওতাবাজি,
হ্যালুসিনেশন... এসব প্রমান করার জন্য
একপায়ে খাড়া । সে কোনো কিছুকেই
ভয় পায়না, এমন কথাও বলে বেড়ায়
ব্র্যাডলাফ ।
একদিন তার এই
অচরনে খেপে গিয়ে একজন চ্যালেঞ্জ
ছুঁড়ে বসল- ''তুমি যদি এতই সাহসী হও,
তবে তার প্রমান দিতে হবে ।
রাতে দুয়ার আটকানো একটা গির্জার
মধ্যে থাকতে হবে,
সঙ্গে থাকবে কফিনে ভরা একটা লাশ
।"
সঙ্গে সঙ্গে ব্র্যাডলাফ জানাল তার
কোনো আপত্তি নেই এতে ।
কিছুদিনের মধ্যে সুযোগও মিলে গেল
।
গির্জায় নিয়মিত আসা ধার্মিক এক
লোক মারা গেলেন । গির্জার পাতাল
ঘরে রাখা হলো কফিনে ভরা মৃতদেহটা ।
তবে কফিনের
ডালাটা খুলে দেওয়া হলো।
নিভিয়ে দেওয়া হলো গির্জার সমস্ত
বাতি । দরজা বাইরে থেকে বন্ধ
করে চলে গেল সবাই ।
গির্জায় জীবিত মানুষ বলতে থাকল
কেবল ব্র্যাডলাফ । বাহির থেকে যখন
দরজাটা লাগানো হলো গির্জার,
তখনই অস্বস্তিকর
একটা অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ল তরুনটির
মনে । এখান
থেকে পালিয়ে যেতে ইচ্ছা করল ।
মনের ভিতর জমতে শুরু করা ভয়,
কুসংস্কার... এগুলোকে জোর
করে সরিয়ে
দিয়ে গির্জাটা ঘুরে ফিরে দেখতে অগ্রসর
হলো ।
জানালা গলে উজ্জ্বল চাঁদের
আলো ঢুকছে ভিতরে ।
তবে এতে করে নানান দিকে, বিশেষ
করে গির্জার শেষ প্রান্তের
সারবাঁধা বেদি আর বসবার আসনগুলোর
পাশে অদ্ভূত ছায়া তৈরী হয়েছে ।
হেঁটেহেঁটে কৌতূহলী দৃষ্টিতে সবকিছু
দেখছে ব্র্যাডলাফ । কারন অনেকদিন
পর আবার একটা গির্জায়
ঢুকেছে সে । তারপর পাতাল ঘরের
দিকে এগোল সিঁড়ি ভেঙ্গে ।
নীচে নেমে সাহস করে চলে এল
একেবারে কফিনের ধারে ।
একদৃষ্টিতে বেশ কিছুক্ষন মৃতদেহটার
দিকে তাকিয়ে রইল । তারপর আবার
গির্জার মূল অংশে চলে এল ।
এখানে একটা সুবিধা মত
জায়গা খুঁজে পেয়ে শুয়ে পড়ল ।
একটু পরেই কেমন ঘুমঘুম
আসতে লাগল । সন্দেহ নেই অল্প সময়ের
মধ্যে ঘুমিয়েও যেত ।
কিন্তু এমন সময় পাতাল ঘর থেকে মৃদু
একটা শব্দ কানে এল ।
কারো জোরে শ্বাস নেওয়ার
আওয়াজের মত লাগল । তারপর আরও
কিছু শব্দ হলো যার বর্ননা ভাষায়
প্রকাশ করা কঠিন । তার শুধু
মনে হলো চাপা নিস্তব্ধতার মধ্যে এই
মৃদু শব্দগুলোই ভয়ের শিরশির
অনুভূতি ছড়িয়ে দিচ্ছে শরীরে ।
এমন ভূতুড়ে আওয়াজ
কে করছে ভেবে কূল কিনারা পেল
না । অন্ধকারে এক
দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল,
আবছাভাবে যদি কিছু ধরা দেয়
চোখে । তারপরই প্রথমবারের মত
পাতাল ঘরের সিঁড়িতে ক্ষীন
একটা পদশব্দের মত
শুনলো ।
শুরুতে ওটা মৃদুই থাকল,
তবে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকল । এখন
পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছে । আর
কোনো সন্দেহ নেই এটা পায়ের শব্দ ।
যেন কোনো মানুষ পাতাল ঘর
থেকে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে আসছে ।
কিন্তু পাতালঘরে আছে কেবল
মড়াটা !!
উঠে দাঁড়াল ব্র্যাডলাফ । মাথার
পিছনের চুল খাড়া হয়ে গেছে ।
কাঁপুনি ধরে গেছে শরীরে ।
দরজার দিকে দু'কদম এগুলো,
কী আশা করছে নিজেও জানে না ।
তারপর যখন তাকাল চাঁদের আলোয়
ওটাকে দেখল এগিয়ে আসতে ।
মড়াটা...
যেটাকে পাতাল কফিনের
মধ্যে দেখে এসেছে ।
আতঙ্কে তখন উন্মাদ
অবস্থা একদা সাহসী তরুনের ।
দৌড়ে গেল মড়াটার দিকে । ওটার
গায়ে এখনো জড়ানো শবের
সাদা কাপড়.. তবে ছেড়া আলুথালু ।
একটা হাত তুলল ব্র্যাডলাফ ।
কিন্তু এসময়েই মড়ার হাত সচল হলো ।
চোয়ালে প্রচন্ড এক
আঘাতে ধরাশয়ী হলো ব্র্যাডলাফ ।
ভোরে যখন ব্র্যাডলাফের
বন্ধুরা গির্জায় এল চমকে উঠল তারা ।
ব্র্যাডলাফ অজ্ঞান
হয়ে পড়ে আছে আর
মড়াটা ঝুঁকে ঠান্ডা পানির
ছিটা দিচ্ছে তার মুখে । তবে এখন
সে শবের সাদা পোশাক
থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিয়েছে ।
অবশ্য কিছুক্ষনের মধ্যেই ওই মড়া মুখ
থেকেই রহস্য ভাঙল ।
-
মড়া ভেবে যাকে কফিনে পুরে গির্জায়
পাতালে এনে রাখা হয়
সে আসলে মরেনি । বরং কোনো
একটা ধাক্কায় জ্ঞান হারিয়ে
ফেলেছিল । কিছুক্ষনের জন্য সম্ভবত
শ্বাস-প্রশ্বাসও পাওয়া যায়নি ।
তাই সবাই ধরে নেয়
লোকটা মারা গেছে।
রাতে জ্ঞান ফিরে আসে তার ।
তারপর হেঁটেহেঁটে গির্জার
ওপরে ওঠা শুরু করে । ঠিক তখনই
দোরগোড়ায় আতংকিত ব্র্যাডলাফের
সঙ্গে
দেখা হয় ।
রাতের বেলা গির্জায়
একটা লোককে দেখে স্বভাবতই
দুষ্কৃতিকারী হিসেবে ধরে নেয় সে ।
তাই দেরী না করে আঘাত হানে ।
শক্তিশালী একজন মানুষ সে, তারপর
আবার মুষ্টিযোদ্ধা ।
তাই চোয়ালে ঘুষি খেয়ে ধরাশয়ী হয়
ব্র্যাডলাফ ।
অবশ্য প্রাক্তন মড়া আর অন্যদের
চেষ্টায় দ্রুতই জ্ঞান
ফিরে আসে ব্র্যাডলাফের ।
তবে আর কখনো সাহসের বড়াই
করেনি সে ।