(বারান্দায় কিছু একটা হাটছে (প্রথম পর্ব)
সেদিন বিকেলের ট্রেনেই আমরা ঢাকা রওনা দিলাম । অরুন সকাল থেকেই মন গম্ভীর করে রেখেছে আমার সাথে কোন কথা বলছে না। অরুন এমনিতে হাসি খুশি থাকে। এমন গম্ভীর মুখ তাকে কখনো দেখিনি। আমি অনেক বার তাকে জিজ্ঞাস করেছি সে একবারো উত্তর দেইনি।রাত তখন আট্টা কি নয়টা । আমি আর অরুন ট্রেনের করিডোরের সামনে বসেছি। ট্রেনের কামড়াটা অপেক্ষাকৃত নির্জন। ট্রেনের সকল বাতি আগে থেকেই নিভানো । পাশের জানালা খোলা । জানালা দিয়ে শীথল হাওয়া ঢুকছে। চাদের আলো খানিক টা এসে পরেছে অরুনের মুখে। আর এতেই আমি তাকে আবছা ভাবে দেখছি । এ অদ্ভুদ পরিবেশে অরুন আমার দিকে ফিরে আচমকা বলল । আচ্ছা শহিদ তুই আত্মায় বিশ্বাস করিস । আলো ছায়াময় সেই নির্জন ট্রেনের কামরায় এমন প্রশ্ন শুনে শিউরে উঠে বলি । না আমি বিশ্বাস করি না । হঠাত এ প্রশ্ন করলি যে । অরুন কিছুক্ষন চুপ করে থেকে কি যেন ভাবতে লাগল ।
তাহলে শোন ,
তোকে একটা ঘটনা বলি । অনেক দিন আগে মধুপুর গ্রামে দুজন মানুষ মারা যায় । একজন কে মসজিদের পাশে আমগাছে ফাসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয় । এর মাস খানিক পরে একি গাছে ফাসি দিয়ে আত্মহত্যা করে । গ্রামঞ্চলে এ নিয়ে খুব তোলপাড় হয় । তখন থেকে গ্রামের মানুষ এই গাছ টি এড়িয়ে চলে। পারতপক্ষে কেউ রাতে ভুলেও আমগাছটির তলা দিয়ে যাইনা । আমি গতকাল রাতে নামাজ পড়ে গাছটির নিচ দিয়ে যাচ্ছিলাম । তখনো অন্ধকার কাটেনি । চাদের আলো হয়ত ছিল কিন্তু আমি যখন যাচ্ছি তখন ঘোর অন্ধকার । এমনিতে আমি খুব সাহসী কিন্তু আমগাছের তলা দিয়ে যখন যাচ্ছিলাম ,তখন খেয়াল করলাম আমি আসলে ভয় পাচ্ছি । সম্পূর্ন বিনা কারনে ভয় । নির্জন একটা রাস্তা দিয়ে গেলে যে কেও ভয় পেতে পারে। কিন্তু আমার ভয় টা সম্পূর্ন অন্যরকম । আমার মনে হল আমগাছ টির গোড়ায় কিছু একটা দাড়িয়ে আছে । আমি কিছুই দেখিনি । তবুও মনে হল কিছু একটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে । তার অস্তিত্ব নেই শরীর নেই ,কিছুই নেই তবুও মনে হল কিছু একটা আমার পাশে আছে। ঠিক তখনি অন্ধকারে দেখলাম ঠিক মানুষ বলা যায় না । তবুও অনেক টা মানুষের অবয়ব আম গাছে গোড়ায় দাড়িয়ে আছে। তখন এক জান্তব ভয় আমাকে গ্রাস করল। এমন তীব্রভয় আমি আগে কখনো পাইনি। আমি খেয়াল করলাম আমার পা কাপছে। আমি এক চিতকার দিয়ে মসজিদের বারান্দায় এসে অজ্ঞান হয়ে যায় । তারপর কি হয় জানিনা । জ্ঞান ফিরলে দেখি মসজিদের বারান্দায় শুয়ে আছি আর অনেক মানুষ ভিড় হয়ে আছে ।
এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে অরুন হাপাতে লাগলো । আমি প্রচন্ড ভয়ে হারিয়ে ফেলেছি । সেদিন ট্রেনে অরুনের সাথে আর কথা হয়নি । অরুন সাড়া পথেই কি ভাবছিল।
রাত তিনটায় যখন ট্রেন ঢাকাই পৌছায় তখন ট্রেন থেকে নেমে শুধু বলল যাই। পরে দেখা হবে অরুন থাকে মগবাজারে ,তার বাবা মাকে নিয়ে । আর আমি থাকি মালিবাগে । একা একটা ফ্ল্যাট ভাড়া করে । বাসায় ফিরে সেদিন আর ঘুমোতে পারিনি। বই পড়ে ,আলো জ্বালিয়ে কোন রকম রাত পার করলাম ।
কিছুদিন পর প্রচন্ড কাজের চাপে অরুনের গল্প ভুলেই গিয়েছিলাম । মধুপুর যাওয়ার এক সপ্তাহ পরে হঠাত অরুন আমাকে ফোন করে উদভ্রান্তের মত বলে দোস্ত তুই আমাকে বাচা
কেন কি হয়েছে ?
-আমি বোধ হয় পাগল হয়ে যাচ্ছি ।
-কি হয়েছে খুলে বল । সেদিন গভীর রাতে মধুপুর থেকে ফিরে ,ট্রেন স্টেশন থেকে একটা রিক্সা নিয়ে বাসায় ফিরছিলাম রিক্সাটা চলতে চলতে যখন অন্ধকার গলিতে ঢুকলো ,ঠিক তখনি আমার মনে হল কিছু একটা আমার পাশের খালি জায়গায় বসে আছে। অনুভূতি টি এতই তীব্র যে আমার পাশে একঝলক তাকিয়ে দেখলাম । সেখানে কিছুই নেই । আমি বুঝতে পারলাম এটা আমার মনের ভুল । আম্র মনে এক অদ্ভুদ চিন্তা আসল ,মধুপুরের ভয়ানক কোনকিছু আমার সাথে করে নিয়ে আসেনি তো । মন থেকে যত ই চিন্তাটা ফেলে দিতে চাইলাম ততই তা ঝাকিয়ে বসলো । রিক্সা ভাড়া মিটিয়ে যখনি আমাদের বাড়ির গলিতে ঢুকলাম তখনি ওই টাকে দেখলাম সামনেই অন্ধকারে দাড়িয়ে আছে । তার চোখ মুখ হাত পা কিছুই নেই। মনে হল আমার দিকে চেয়ে আছে। তার মুখে ত্রুটির হাসি । আমি দৌড়ে বাড়ির গেটে যেয়ে দাড়োয়ান কে ডাকতে থাকি । দাড়োয়ান আমাকে ধরে নিয়ে রুমে দিয়ে আসে। এতকথা অরুন একনাগাড়ে বলে হাপাতে লাগল।
আমি বললাম এসব তোর কল্পনা । চিকিতসা নিলে মনে হয় ঠিক হয়ে যাবে ।
-প্রথমে আমিও তাই ভেবেছিলাম । তিনজন সাইক্লোজিস্টের সাথে দেখা করে ছিলাম সব বলেছি কিন্তু তারা কিছুই করতে পারেনি । এখন আমি তাকে আমার রুমে দেখি .কিছু একটা হাটছে আমার রুমে । ঘর অন্ধকার হলেই প্রায় দেখি মশারির ওপাশে কিছু একটা দাড়িয়ে আছে । তাই এখন বাতি জ্বালিয়ে ঘুমাই।
আমি বললাম -ঠিক আছে তোকে আর কিছু সাইকিয়াট্রিস্টে
ঠিকানা নিয়ে অরুন ফোন রেখে দেয়।
আমার দেয়া ঠিকানাতে গিয়েছিল কিনা ঠিক জানি না। কিন্তু মাসখানেক পর অরুন যখন তার রুমের ফ্যানে ফাস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে তখন খুবই অবাক হলাম । বহু কাজের মধ্যেও তার জানাযায় গেলাম । সেদিন তার বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে খুব কাদলেন অনেকক্ষন । কেন অরুন আত্মহত্যা করেছে তা কেও বলতে পারেনি। তবে শেষের দিকে অরুন গভীর রাতে কে কে বলে চেচিয়ে উঠত আর একা একা কথা বলত । (ঘটনাটি এখানে শেষ হতে পারতো কিন্তু আমিও নিজেও এ ঘটনায় জড়িয়ে গেলাম । আপনাদের দ্বিতীয় পর্বে বলব । কারা শুনতে চান দয়া করে জানাবেন । কেন না এই ঘটানা আসলেই সত্যি আপনারা পড়লেই লিখা সার্থক হবে।
No similar posts
Subscribe to:
Post Comments
(
Atom
)
No comments :
Post a Comment