ভুতুরে সময় লাশকাটা ভূতের গল্প ৪
সময়টা ঠিক যাচ্ছেনা অপুর।লেখক মানুষ
বলে কথা।তার উপর খিরিস্তি কাজের
চাপ।প্রায় ৭টা ভৌতিক গল্প রিলিজ
করতে হবে। সময়টাও খারাপ যাচ্ছে ওর।
লেখার চাপে হেমার সাথে দেখা পর্যন্ত
করতে পারছে না। মনে হচ্ছে যেন তামাম
পৃথিবীর চাপ যেন ঘাড়ে এসে পড়েছে।
যাইহোক খুব মনোযোগ দিয়ে একটা গল্প
লিখতে বসেছে।হঠাৎ
ক্রিং ক্রিং শব্দে ঘোর কাটল অপুর।বেশ
একটা বিরক্তি নিয়ে ফোন কানে ধরতেই
হেমার বকুনি। মেয়েটা প্রচন্ড
ভালোবাসে অপুকে।বেচারা অপুর আর
কি দোষ আগামীকালের মধ্যেই একটা গল্প
খতম করতেই হবে। যাইহোক হেমার
ফোনটা কেটে দিয়ে গল্প
লিখতে বসে গেল।
যে গল্পটা সে লিখছে তা একটা মুন্ডুহীন
লাশের গল্প।গতকালই লাশটা দেখেছিল
মর্গে। লাশটা দেখেই ভেবেছিলো মনের
মাধুরি মিশিয়ে গল্পটাকে আরো চাঙা করবে।
লাশটার অবস্থা এতটাই বিভৎস্য ছিল
যে সেটা কোন মানব চক্ষুর সামনে আনাটাই
ভয়ংকর। লাশটা শনাক্ত করা না গেলেও
বোঝা যাচ্ছিলো যে খুব নির্দয়
এবং আক্রশে হত্যাটা করা হয়েছিল।
খুব মনোযোগ দিয়ে লিখতে লাগলো অপুর।
মনের কল্পনাকে বাস্তব রুপ দিতে লাগল
সে। ঘড়িতে রাত ১:০৭ বাজে।
সে কিছুক্ষনের জন্য লেখা বাদ
দিয়ে ফ্রেশ হতে বাথরুমে চলে গেল।
বাথরুম থেকে ফেরার
পথে সে ভাবলো একটু
গলাটা ভেজানো যাক।তাই সে ফ্রিজ
থেকে একটা মদের বোতল,কিছু মাংস আর
কিছু বার্গার বের করে। সে খাবার
গুলো নিয়ে ঘরে ঢুকতে যাবে ঠিক তখনই
বিদ্যুৎ চলে যায়।কি আর করা পকেট
থেকে মোবাইলটা বের করে টর্চটা অন
করে খাবার গুলো ওর খাটের পাশে ছোট
টেবিলটাতে রেখে ড্রয়ার
থেকে মোমবাতিটা বের করলো।
মোমবাতিটা জ্বালিয়ে টেবিলে রাখল
এবং ও যেখানটায় বসে লিখছিল তার
সামনের জানালাটা আলতো করে খুললো।
বাইরে থেকে চাদের
ঝকঝকে আলোটা ঘরটাকে আলোকিত
করছিল। মাঝে মাঝে শীতল বাতাস
জানালা ফাক দিয়ে ঢুকছিল আর এ
কারনে জানালা গুলো বিকট বিকট শব্দ
করছিল। এমনিতে রাত তখন ১:৪০ আর
এলাকাটা শুনসান তাই সামান্য শব্দও যেন
বিকট লাগছে। যাইহোক অপু আবার
লিখতে বসলো। টেবিল থেকে মদের
বোতলটা হাতে নিয়ে মুখে এক চুমুক
দিয়ে বিদেশী ব্রান্ডের একটা সিগারেট
ধরালো সে।সিগারেটের ধোয়ায়
ঘরটা আরো অদ্ভুত হয়ে উঠছে।লেখায় মন
দিয়ে অপু
যেইনা কলমটা হাতে ধরেছে ঠিক তখনই
পাশের রুম থেকে একটা খ্যাচ শব্দ।কান
খাড়া করে শুনতে চেষ্টা করলো অপু।না,
কোন শব্দ নেই ওটা বোধ হয় ভুল শুনেছে।
আবার লিখতে যাবে ঠিক তখনই দরজায়
আচর কাটার শব্দ।এবার একটু সজাগ
ভঙিতে দরজায় চেয়ে দেখলো অপু।নাহ্!
দরজা তো বন্ধ। তার উপর বাসায় কেউ নেই।
সবাই গেছে নানুর বাসায়।
তাহলে কে হতে পারে, চোর নয় তো।অপু
ভাবল। এবার আর থাকতে না পেরে চেয়ার
থেকে উঠে দরজার
দিকে এগোতে থাকলো সে। একটু একটু
ভয়ে আস্তে করে দরজা খুলে দেখে কেউ
নেই।দরজাটা লাগিয়ে ঘরে ঢুকতেই
সে যা দেখলো সেটা খুব ভয়ানক। চাদের
আবছা আলোয় সে দেখলো ইজিচেয়ারটায়
কে যেন দোল খাচ্ছে।
কাছে এগিয়ে যা দেখলো তাতে অপুর
সারা শরীর হিম হয়ে গেল।একি!
এটা হতে পারেনা। এ,,,,টা তো গতকালের
সেই লাশটা। ওকি স্বপ্ন দেখছে।
চোখটা ঘষে নিয়ে দেখে,
ইজিচেয়ারটা তো খালি আর কেউ
তো সেখানে বসে নেই। সব কল্পনা।
নেশাটা মনে হয় একটু বেশি ধরেছে।বোধ
হয় হ্যালুছিনেসন।অপ
ু ভাবলো। সাত পাচ
ভাবতে ভাবতে সে যেইনা টেবিলের
কাছে আসছিল ঠিক তখনই
একটা অট্টহাসি শুনে অপুর
আত্মাটা খাঁচা ছাড়ার মত অবস্থা।
সে চোখ বড় বড় করে দেখলো সামনে সেই
লাশটা।
লাশটা গলা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত
ঝড়ছে আর
একহাতে মুন্ডুটা লাফালাফি করছে এবং অপুর
দিকে তাকিয়ে হাসছে।
গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে লাগলো অপু
কিন্তু ওর গলাটা যেন কেউ শক্ত
করে চেপে ধরে আছে। ও প্রায়
মরো মরো হাৎ একটা দমকা হাওয়ায়
জানালাটা বিকট শব্দ করে আর সম্বিৎ
ফিরে পায় অপু। ও খুব ঘাবড়ে গেছে।ও
সামনে তাকিয়ে দেখলো কোথাও কিছু
নেই। ও ভাবলো,এতক্ষন সে বোধহয় স্বপ্ন
দেখছিল।মাথায় প্রচন্ড
যন্ত্রণা নিয়ে শুয়ে পড়লো সে।হাতের
ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে রাত ৪:১৭। আর
কিছুক্ষন পরেই ভোর হবে।
সর্বশরীরে কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো সে।
চোখটা প্রায় লেগে এসেছে হঠাৎই
একটা ঝাকুনি আর ও দেখলো খাট
থেকে প্রায় ২হাত
উপরে শুন্যে ভাসছে সে আর ইজিচেয়ারটায়
লাশটা নিজেকে এলিয়ে দিয়ে ওর
দিকে তাকিয়ে হাসছে আর বলছে কেমন
লাগছে মুন্ডুহীনের গল্প।অপু দোয়া দুরুদ
পড়ছে আর ভাবছে এই
অপয়া সময়টা ওকে ছাড়ছেনা কেন! মুহুর্তেই
ধপাস শব্দে সে শুন্যে থেকে খাটের উপর
পড়ে গেল এবং লাফিয়ে খাট
থেকে উঠে দাড়ালো।আচমকাই
হাতঘড়িতে সময়টায় চোখ পড়তেই
সে দেখলো রাত তখনও ৪:১৭।ওর সমস্ত
শরীর ঘামে ভিজে গেছে।ঠিক তখনই
কারেন্ট চলে আসে আর বাল্বের আলোয়
ঘরটা যেন জীবন ফিরে পায়। মুহুর্তেই অপুর
মনে হলো ও বোধহয় অতিরিক্ত মদপানের
কারনে হ্যালুছিনেসনে আক্রান্ত হয়েছিল।
খাট থেকে সরে এসে যখন সে টেবিলের
কোনায় দাড়াল সে দেখতে পেল খাতার
উপর একটা মুন্ডুর ছবি অংকন করা আর
পাশে লেখা মুন্ডুটা পাওয়া গেছে।হঠাৎ
একটা ফোন বাজল।ফোনটা কানে ধরতেই
অপর প্রান্ত থেকে অপুর এক পুলিশ বন্ধু
বললো, দোস্ত গতকাল
যে লাশটা মর্গে দেখলি সেটার
মুন্ডুটা আজ রাত ৪:১৭
মিনিটে একটা পুরোনো বাড়ির
উপরতলা থেকে পাওয়া গেছে। অপু
ফোনটা কেটে দিয়ে ভাবলো এটা কি স্বপ্ন
নাকি বাস্তব।