ভুতুরে গল্প ১

আধারের ছত্রছায়ায় মাঝে মাঝে চাদের উকিঝুকি।পরিবেশটা থমথমে। দুরদুরান্ত থেকে আবছায়া আলো গুলো অস্পস্ট ভাবে চোখে ধরা দিচ্ছিল আবিরের। আবির সবে মাত্র গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছে। চাকরীর জন্য প্রায়ই ধরনা দিতে হচ্ছে এক একটি কোম্পানিতে। সব কিছুই ঠিক আছে শুধু দরকার একটু তদবির।

যাইহোক, আবির প্রায়ই রমনায় বেড়াতে যায়। আজও গিয়েছিলো রুমকির সাথে দেখা করার জন্য। কফিশপে আড্ডা দিতে দিতে দেরি হয়ে গেল ওর আজ। তার উপর খুশির ব্যাপার হলো ওর আজ একটা চাকরী হয়েছে।৭দিন পরে জয়েন।তাই সে ভাবল এই ফাকে বাড়ি থেকে ঘুড়ে আসলে মন্দ হয়না। যেই ভাবা সেই কাজ, ফোনেই ট্রেনের টিকিট কেটে ফেলল আবির।রাত ১০টায় ছাড়বে।

যাইহোক কপিশপ থেকে বেড়িয়ে স্টেশনের দিকে পা বাড়ালো সে।স্টেশনে পৌছে হাতের ঘড়িটায় চোখ বুলিয়ে দেখে রাত ৯.৪৯।যথা সময়ে ট্রেন আসলো। ট্রেনে উঠে ছিমছাম একটা কামড়ার এককোনে সে জায়গা করে নিল। ট্রেন চলছে। হঠাৎ পাশের এক বয়স্ক চাচা বলে উঠলেন-বাজান কই যাইবা,আবির বলল-কুষ্টিয়া,বাসায়।লোকটি বলল-তা,বাজান এত রাতে যাওয়াটা বোধহয় ঠিক হইলো না,যে দেশের অবস্থা তারউপর তোমার বাড়ি বোধহয় গ্রামে নাকি বাজান? আবির-হ্যা গ্রামে তো!
 
চাচা-না, তেমন কিছুনা ঐ ধরো ভুত প্রেত।আবির-চাচা কি বলেন যে,এই প্রযুক্তির যুগে ভুত! হাসালেন।আমি ও সবে বিশ্বাস করিনা সব মনগড়া কাহিনী।চাচা-বাজান,কিতা কও। এই দুনিয়ায় ওরা কোন রুপে চলাফেরা করে বুঝতেই পারবানা।বাবারে এমনো তো হইবার পারে আমি নিজেই ভুত কিন্তু তুমি জানোনা।আবির-চাচা,কি বলেন আপনি ভুত? ভুতেরাও তাহলে ট্রেনে চলাফেরা করে তাহলে!চাচা-বাজান, আমার কথা উড়াইয়া দিতাছো,বুঝবানে।সামনাসামনি হওনাই তো ভুতের তহন বুঝবানে।বাজান, একটা গল্প কই মনোযোগ দিয়ে শুনবা।আবির-আচ্ছা,বলেন আপনার ভুতুরে কাহিনী।চাচা-কয়েক বছর আগে একটা পোলা ট্রেনে বাড়ি যাইতেছিল।হ্যার বাড়ি একটা শুনসান গ্রামে,সে ভুতে বিশ্বাস করতোনা।ট্রেনে একজন বয়স্ক লোকের সাথে হ্যার ভুত নিয়া অনেক কথা হয় কিন্তু হ্যায় কিছুই বিশ্বাস করবার চায়না। তো পোলাটা যখন ট্রেন থাইকা নামলো,ও দেখে বাড়ি যাওয়ার কোন যানবাহন নাই।তাই সে একাই বাড়ির পথে রওনা দেয়।অন্ধকার রাত মাঝে মাঝে দুরর থেকে বাল্বের আলো চোখে আসে। কয়েকবছর আগে এই রাস্তাটা ছিলো না।এর মাঝ বড়াবড় একটা বটের গাছ ছিল। গাছটা কাইটা রাস্তা বানাইছে এলাকার চেয়ারম্যান। তো পোলাটা একাই যাইতেছে। মনে মনে সে ট্রেনের হেই চাচার কথা মনে করতাছে।হঠাৎ সে দেখে রাস্তার মাঝ বড়াবড় একটা বটগাছ।সে চমকাইয়া উঠে। এইডা কিভাবে সম্ভব। এখানে তো কোন গাছই আছিলোনা,এইডা আইলো কোথা থাইকা।পোলাটা গাছ পাড় হইয়া যেই যাইতে ধরলো দ্যাখে ট্রেনের হেই চাচা গলায় দড়ি লাগাইয়া ডালে ঝুইলা আছে।আবির-আপনি চুপ করেন যতসব গাজাখুরি গল্প,আমাকে ভয় দেখাতে চাচ্ছেন,রাবিশ। বলেই সে ট্রেনের বাথরুমে চলে গেল। বাথরুম থেকে আসার পরে সে দেখলো চাচাটা আর সেখানে নেই। সে পাশের ছেলেটাকে বললো চাচা মিয়া কই গেলো বলতে পারো। ছেলেটা বললো-কিসের চাচা,এখানে তো কেউ ছিলোনা।আর আপনি কারসাথে এতক্ষন কথা বলছিলেন,কিছু খেয়েছেন নাকি। আবির চোখ কপালে তুলে-কি? তাহলে উনি কে? বলতে বলতে ট্রেন স্টেশনে থামলো। আবির নেমে দেখে কেউ নেই,পরিবেশটা শুনসান।ও ফোনটা বের করে ওর চাচাতো ভাইকে ফোন করে বলে যে একটা সাইকেল নিয়ে আসতে।ওর ভাই বলে আমি ১৫ মিনিটের মধ্যে আইতেছি,আফনে খাড়ান।বলেই ফোনটা কেটে দেয়।আবির মনে মনে ভাবে ও আসুক কতক্ষন আমি এগোতে থাকি।

আধারের মাঝে মাঝে চাদ উকিঝুকি দিচ্ছে,পরিবেশটা থমথমে। আবির হাটছে তো হাটছে আর ট্রেনের চাচার কথা মনে করছে।মনে পড়ে গেল লোকটি বলছিল গল্পের সেই ছেলেটিও এসব ভেবেছিল।তার মানে ওটা কি আমি,বলতেনা বলতেই হঠাৎ দেখে রাস্তার মাঝ বড়াবড় সেই বট গাছটা। সে ভয়ে ভয়ে গাছটা পার হতে যাবে ঠিক সেই মুহুর্তেই দেখতে পেল সেই ট্রেনের চাচাটা গলায় ফাস লাগিয়ে ডালে ঝুলে রয়েছে। দেখামাত্রই আবির জ্ঞান হারায়। জ্ঞান ফিরলে সে দেখে ওর মাথায় পানি ঢালা হচ্ছে।ওর চাচাতো ভাই বলে উঠে-ভাইজান আপনি ওভাবে মাটিতে পড়েছিলেন কিভাবে,আপনার ঘাড় তো মটকাইয়া যাইতো,ভাগ্যিস আমি গেছিলাম। আবির ভাবলো, ভাগ্যিস ট্রেনে চাচাকে কথার মাঝখানে আটকিয়েছিলাম নইলে আজকে উপরে চলে যেতাম।আবির মুখ তুলে চেয়ে দেখে ঝোপের আড়ালে সেই চাচা ওর দিকে হাসছে আর বলছে বেচে গেলা বাজান।আবির মুখ ফুটে একবার বললো-চাচা। বলেই আবার অজ্ঞান।
 

ভুতুরে

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
sr7themes.eu.org